কলকাতা: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাঙালির বৈঠকখানায় তার নিত্য যাওয়া-আসা।
ঋতুপর্ণা এতোদিন ছিলেন মূলত বড়পর্দার মানুষ। এবার তাকে নিয়মিত দেখা যাবে টেলিভিশনে। জি বাংলা চ্যানেলের মাধ্যমে এবার ছোটপর্দায় পা রেখেছেন ৪৫ বছর বয়সী এই তারকা। চ্যানেলটির নতুন গেম শো ‘হোম মিনিস্টার বৌমা’ সঞ্চালনা করছেন তিনি।
এবারই প্রথম সঞ্চালকের ভূমিকায় পাওয়া যাবে ঋতুপর্ণাকে। সম্প্রতি কলকাতার উপকণ্ঠে জোকা সংলগ্ন শ্রী নারায়ণী স্টুডিওতে ‘হোম মিনিস্টার বৌমা’র সেটে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে উঠে এলো তার জানা-অজানা অনেক কথা।
বাংলানিউজ: মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন কেমন লাগছে?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: টেলিভিশন চেনা মাধ্যম। কিন্তু বড়পর্দায় এতো বছর কাজ করেছি যে এটাও প্রায় ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছে। আমার শুরুটা কিন্তু টেলিভিশনে। তবে সেই সময়ের থেকে টিভি অনেক বদলেছে। ‘সাদা পায়রা’ দিয়ে আমার শুরু। এরপর প্রভাতদার (পরিচালক প্রভাত রায়) ‘আন্দোলন’ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।
বাংলানিউজ: কিন্তু টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, টিভি শো প্রযোজনা- এসব তো করতেন নিয়মিত...
ঋতুপর্ণা: ছবির ব্যস্ততার জন্যই টেলিভিশন থেকে সরে গিয়েছিলাম। তবে এটা সত্যি মাঝে কয়েকটি টেলিভিশন শো’র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলাম। এগুলো নাচের অনুষ্ঠান। ইটিভির একটি অনুষ্ঠান ছিলো ‘ঋতুর মেলা ঝুম তা রা রা’। আমি আর শিবু (পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) মিলে প্রচুর টিভির অনুষ্ঠানও প্রযোজনা করেছি। সেগুলোরও আমিই ছিলাম ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
বাংলানিউজ: ‘হোম মিনিস্টার বৌমা’ সঞ্চালনা করতে রাজি হলেন কেনো?
ঋতুপর্ণা: আমি সঞ্চালনায় আগ্রহী ছিলাম না। কারণ শো হোস্ট করা সোজা নয়। টেলিভিশনটা স্বতন্ত্র জগৎ। সেখানে আদৌ কিছু করতে পারবো সেই বিশ্বাসটা আমার ছিলো না। অনেক চ্যানেল থেকেই নিয়মিত অফার আসতো। মুম্বাই টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো’র অফারও ফিরিয়ে দিয়েছি।
এই শো করার আগেও অনেকবার ভেবেছি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বললেন, এই শো সৌরভ গাঙ্গুলীর ‘দাদাগিরি’র স্লটে আসবে। প্রাইম টাইম শো, রাত সাড়ে নয়টা। এই অনুষ্ঠানের জন্য চ্যানেলটি এমন একটা মুখ চাইছিলো যিনি দাদার স্লটটিকে ‘জাস্টিস’ করতে পারেন। তাদের প্রথম পছন্দ ছিলাম আমি। তাই আর না করতে পারলাম না।
বাংলানিউজ: এর কনসেপ্ট কী আপনার রাজি হওয়ার আরেকটি কারণ?
ঋতুপর্ণা: অবশ্যই। আমাদের যৌথ পরিবারের কনসেপ্ট আজ হারিয়ে যাচ্ছে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, শহুরে ব্যস্ততায় আমরা পরিবারকে নিয়ে আনন্দ করতে ভুলে যাচ্ছি। সেই আনন্দ উদযাপনই এ আয়োজনের মূল ভাবনা। চারজন বৌমা প্রতিযোগী তাদের স্বামী, শাশুড়ি, ননদ, জা, দেবর ও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের নিয়ে খেলায় অংশ নিচ্ছেন।
আমার মনে হয় না এতো বড় গেম শো ইতিপূর্বে বাংলা টেলিভিশনে হয়েছে। ‘হোম মিনিস্টার বৌমা’র আপাতত ৫৪টি পর্ব হবে এমনটাই স্থির হয়েছে। পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন অভিষেক মিত্র। ইতিপূর্বে একই চ্যানেলে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্স বাংলা ড্যান্স’, ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’, ‘মীরাক্কেল’-এর ক্রিয়েটিভ প্রযোজকের দায়িত্ব সামলেছেন অভিষেক।
বাংলানিউজ: আপনি তো ছবি নিয়েও ব্যস্ত। সময় বের করছেন কীভাবে?
ঋতুপর্ণা: খানিকটা ব্যস্ত ঠিকই। এই মুহূর্তে পাঁচটা ছবির শুটিং চলছে। সঙ্গে নতুন এই শো। তবে জি বাংলা আমার সময় অনুযায়ী শোটির শুটিংয়ে রাজি হয়েছে। এজন্য চ্যানেলকে ধন্যবাদ দেবো।
বাংলানিউজ: সঞ্চালনার দায়িত্ব সামলাতে অালাদা প্রস্তুতি নিতে হলো?
ঋতুপর্ণা: আমার পনেরো বছরেরও বেশি বিবাহিত জীবন। স্বামী সঞ্জয় বাইরে থাকলেও কলকাতায় আমার শাশুড়ির সঙ্গেই থাকি। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আমার জন্য এ অনুষ্ঠানে প্রতিযোগী বউমাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
বাংলানিউজ: হাতে এখন নতুন কী কী ছবি?
ঋতুপর্ণা: ক্ষুদিরাম বোসের জীবন অবলম্বনে নির্মিত ছবিটা মুক্তি পাবে। অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ‘তেরে আনে সে’ প্রস্তুত হয়ে আছে। পূরব কোহলি, হিতেন তেজওয়ানি আছেন এতে। চন্দ্রপ্রকাশের ‘সিক্স এক্স’-এর কাজ শেষ। এ ছাড়া আরও দুটো ছবির কথা চলছে। সম্প্রতি সোহনলালের একটি মালয়ালাম ছবিতে কাজ করে এলাম। পরিচালক অতনু ঘোষের একটা ছবি শুরু করবো।
বাংলানিউজ: অপনাকে ধন্যবাদ।
ঋতুপর্ণা: আপনাদের এবং আমার সমস্ত দর্শককে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
ভি.এস/জেএইচ