বয়সের কোঠা ৮৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রের চলন-বলন যেন কোনো তরুণীকেই উপস্থাপন করে! মাথার চুলগুলো ধবধবে সাদা।
ঢাকার বনানীতে আর্মি স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় দিন শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে সংগীত পরিবেশন করেন ড. প্রভা আত্রে। শুরু থেকেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বয়সেও কম যান না! তার নান্দনিক গায়নশৈলীর প্রভাময় রাত শ্রোতাদের মনে থাকবে অনেকদিন। একেই বলে বুড়ো হাড়ে ভেলকি!
প্রথমে রাগ শ্যাম কল্যাণে ও পরে রাগ মধুরো কোষে খেয়াল পরিবেশন করেন ড. প্রভা আত্রে। এর মধ্যে মধুরো কোষ তার নিজস্ব সৃষ্টি। তিনি হলেন কিরানা ঘরানার অন্যতম অগ্রজ শিল্পী। সুরেশবাবু মানে ও তার ভগ্নি পদ্মভূষণ হিরাবাই বারোদেকারের কাছে প্রাথমিক তালিম নেন তিনি। প্রবাদপ্রতিম ওস্তাদ আমির খান ও ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁর গান তাকে দারুণ প্রভাবিত করলেও নিজস্ব উদ্বাভবন ও সৃজনে তিনি গড়ে তোলেন স্বতন্ত্র গায়নশৈলী যা সংগীতজগতে তাকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করে। এর মধ্যে মধুরো কোষ অন্যতম।
কানাড়া রাগে ড. প্রভা আত্রে শুনিয়েছেন দাদরা নায়কি। সবশেষে রাগ ভৈরবীতে ভজন গেয়ে শোনান তিনি। তার সঙ্গে কণ্ঠে সহায়তা করেন চেতনা বানওয়াত। তবলায় রোহিত মজুমদার এবং হারমোনিয়ামে ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক। প্রভার হাতে উৎসবের স্মারক তুলে দেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
শুধু খেয়াল নয়; ঠুমরি, দাদরা, গজল ও নাট্যসংগীতে সমান পারঙ্গম ড. আত্রে। তার ঝুলিতে আছে বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে অন্যতম ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, কালিদাস সম্মাননা, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ও ঠাকুর আকাদেমি রত্নপদক।
উৎসবে শনিবার রাতের তৃতীয় পরিবেশনা ছিলো ড. প্রভা আত্রের। এদিন শুরুতেই বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে সরোদে রাগ কাফি পরিবেশন করেন। তারা হলেন মো: কামাল জহির শামীম, খন্দকার শামছুজোহা, মো.ইলিয়াস খান, ইলহাম ফুলঝুরি খান, ইশরা ফুলঝুরি খান, শরীফ মুহাম্মাদ আরিফিন রনি ও আল জোনায়েদ দিদার। তাদেরকে তবলায় সঙ্গত করেন পিনু সেন দাশ ও রতন কুমার দাশ।
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের গুরু ওস্তাদ তেজেন্দ্র নারায়ন মজুমদার নবীন শিল্পীদের অভিবাদন জানান এবং এই তরুণদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান।
এরপরের পরিবেশনায় বাঁশির সুরে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শশাঙ্ক সুব্রমনিয়াম। তিনি বাজিয়ে শোনান রাগ পূরবী কল্যাণী। ট্র্যাডিশনাল কম্পোজিশন বাজিয়ে শেষ করেন নিজের পরিবেশনা। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার, মৃদঙ্গমে পারুপল্লী ফাল্গুন ও তানপুরায় এলভিন মজুমদার। তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।
চতুর্থ পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর তবলা বাজিয়ে শোনান পন্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তিনতালে উঠান, পেশকার, কায়দা, গৎ ও চক্রাদার পরিবেশন করেন তিনি। তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তৃতীয় রাতে নিশাচর শ্রোতাদের সুরের সাগরে ভাসাতে মঞ্চে আরও আসবেন পন্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (ধ্রুপদ), পন্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় (সেতার) এবং ওস্তাদ রশিদ খান (খেয়াল)।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
জেএইচ