ঘুঙুর বাজিয়ে রেলগাড়ির শব্দ সাজালেন মুনমুন আহমেদ। ‘তেরে কেটে ধা তেরে কেটে ধা তা ধিন ধিন তা’র শব্দে অদৃশ্য বল উড়িয়ে মারলেন ঢাকার বনানীস্থ আর্মি স্টেডিয়াম মাঠে বসে থাকা দর্শকদের দিকে।
নাচের মুদ্রাকে জলের মতো সহজ করে তুলতে দৈনন্দিন জীবনকে মিলিয়ে দিলেন মুনমুন আহমেদ। কোকিল, ঝিঁঝি পোকা, ব্যাঙসহ বিভিন্ন পশুপাখির ডাক থেকে নাচের বোল সাজানোর বর্ণনা তার মুখে শুনে দর্শকদের আগ্রহ যেন আরও বেড়ে গেলো। পাশে বসা একজন দর্শকের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘বাহ, মজা তো!’
পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ দিন রোববার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় শুরুতে মুনমুন আহমেদ তার দল ‘রেওয়াজ’কে নিয়ে পরিবেশন করেন দলীয় কত্থক নৃত্য। একক নৃত্যশৈলীতে রাধা-কৃষ্নের মান-অভিমানের একটি পর্ব উপস্থাপন করেও দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি।
মুনমুন আহমেদ তার দলকে নিয়ে ‘ভিন্ন ষড়জে’ গুরুবন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু করেন পরিবেশনা। এরপর স্মরণ করেন নিজের নৃত্যগুরুদের। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আজহার খান ও সৈয়দ আবুল কালামের কাছে। দিল্লির ভারতীয় রামকলা কেন্দ্রে রামমোহন মহারাজ ও রাজকুমার শর্মার কাছে তিনি দীর্ঘদিন তালিম নেন। পরে প্রবাদপ্রতিম পন্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
দেশে ফিরে ‘রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক মুনমুন আহমেদ। রেওয়াজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার ও নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফার কন্যা আনিসা আইরিন আহমেদও আছেন। মা-মেয়ে মিলে উৎসবের মঞ্চে দ্রুতলয়ের একটি তাল পরিবেশন করেন। সবাই মিলে তিন অংশে ত্রিতালে কত্থক পরিবেশন করেন। মুনমুন বলেন, ‘যাদেরকে আমি দীক্ষা দিচ্ছি সেই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে নাচতে পারা আমার জন্য সম্মানের ও ভালোলাগার। ’
এদিন কত্থক পরিবেশনায় অংশ নেওয়া রেওয়াজের অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন ঐশ্বরিয়া রহমান, অবন্তিকা আল রেজা, লাভা বিশ্বাস, মাহিমা মেহনাজ আনাম, মাইশা মালিহা খান, মাসুম হুসেন, নুসরাত ফাতিমা খান, পারিমিতা রহমান, শারমিন সুহেলি খানম, শর্মিষ্ঠা সোনালিকা সরকার, সৌদামনি মজুমদার, উজমা সামাদ, জেরিন তাসফিহ, রেশমা, কাজী তানিসা জামান, রূপকথা চৌধুরী, শিশির বিন্দু বিশ্বাস ও মো: শামীম আশরাফ।
‘তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ বলে এই তরুণ-তরুণী ও কিশোরীদের নিয়ে শেষ পরিবেশনা উপস্থাপনা করেন মুনমুন আহমেদ। নৃত্যের সঙ্গে কণ্ঠে সহযোগিতা করেন তানজিলা করিম স্বরলিপি। বাঁশিতে ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সরোদে সুনন্দ মুখার্জী, এস্রাজে অসিত বিশ্বাস, তবলায় সুবীর ঠাকুর এবং আবৃত্তিতে অপরাজিতা মুস্তফা ও অহিদুজ্জামান।
পরিবেশনা শেষে মুনমুন আহমেদ ও অন্য শিল্পীদের হাতে উৎসবের স্মারক তুলে দেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী।
পরবর্তী পরিবেশনা ছিলো নীলেশ রণদেবের। তিনি তবলায় তিনতাল বাজিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। হারমোনিয়াম সহযোগিতায় ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। তাদের হাতে উৎসবের স্মারক তুলে দেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক একরিম।
চতুর্থ রাতে পরের শিল্পীদের মধ্যে সুরের মূর্ছনা ছড়াতে মঞ্চে আসবেন জয়তীর্থ মেউন্ডি (খেয়াল), পন্ডিত যোগেশ শামসি ও পন্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ( যুগলবন্দি তবলা), রঞ্জনী ও গায়ত্রী (কর্ণাটক কণ্ঠসংগীত যুগলবন্দি), পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার (সরোদ) এবং পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী (খেয়াল)।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
জেএইচ