সংগীতজগতে সন্তুর শব্দটির সঙ্গে পন্ডিত শিবকুমার শর্মার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। নানা বাধা উপেক্ষা করে বাবার অনুপ্রেরণায় কাশ্মিরি লোকসংগীতে ব্যবহৃত সন্তুরকে মার্গসংগীতের মঞ্চে উপস্থাপন করেন তিনি।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার বনানীস্থ আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিনের তৃতীয় পরিবেশনা ছিলো পন্ডিত শিবকুমার শর্মার। তিনি সন্তুরে রাগ যোগ বাজিয়ে শোনান। তার সন্তুরবাদনের প্রথম অংশ ছিলো কিছুটা ধীরলয়ের।
জীবন্ত কিংবদন্তি পন্ডিত শিবকুমার শর্মার অর্জনের তালিকা দীর্ঘ। তিনি পদ্মবিভূষণ, পদ্মশ্রী, তানসেন সম্মান, মাস্টার দীনানাথ মঙ্গেশকর পদক, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি পদক, ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লেটারস, সংগীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন। সোমবার রাতের পরিবেশনা শেষে শিবকুমার শর্মার হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
পরবর্তী পরিবেশনায় খেয়াল শুনিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন কুমার মারদুর। তিনি রাগ পুরিয়া কল্যাণ ও কিরওয়ানিতে ভজন পরিবেশন করেন। তার হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন লেখক আনিসুল হক।
এর আগে পঞ্চম দিনের আয়োজন শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়। শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে রাগ ভূপালী পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ। এ সময় তবলায় তাল দেন স্বরূপ হোসেন ও জাকির হোসেন। শিল্পীদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জী। শিল্পীদের পক্ষে স্মারক গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. লিনা তাপসী।
এরপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ দলীয় সেতার পরিবেশন করেন। তারা হলেন নিশিত দে, সম্য দে, আশিস নারায়ণ সরকার, প্রসেনজিৎ মণ্ডল, আহম্মেদ ইমতিয়াজ হুমায়ুন, টি.এম. সেলিম রেজা, খন্দকার নাজমুস সাকিব, রিংকু চন্দ্র দাস, মেহরিন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জী, জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ ও মোহাম্মদ কাওছার। সেতার, তবলা ও গিটারের সম্মিলিত সুরে রাগ চারুকেশী পরিবেশন করেন তারা। তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও সুপান্থ মজুমদার। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সহ-সভাপতি রুবি গজনবী।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসরের আনুষ্ঠানিক সমাপনী ঘোষণা করা হয় এরপরই। অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মানিত শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান।
মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
পঞ্চম দিনের আয়োজনে পন্ডিত কুশল দাস (সেতার) এবং আরতী আঙ্কালিকরের (খেয়াল) পর বাঁশি বাজিয়ে শোনাবেন পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (বাঁশি)।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
জেএইচ