ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চান ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চান ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীরা ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুধবার (৩০ নভেম্বর) দিনব্যাপী টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলী সমাবেশের মাঝামাঝি মঞ্চে এসে হাজির হন ছোটপর্দার জনপ্রিয় ছয় অভিনয়শিল্পী। তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সেলিম একমঞ্চে দাঁড়াতেই সবার মনোযোগ তৈরি হলো।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুধবার (৩০ নভেম্বর) দিনব্যাপী টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলী সমাবেশের মাঝামাঝি মঞ্চে এসে হাজির হন ছোটপর্দার জনপ্রিয় ছয় অভিনয়শিল্পী। তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সেলিম একমঞ্চে দাঁড়াতেই সবার মনোযোগ তৈরি হলো।

অভিনয়শিল্পীদের পক্ষ থেকে ছয় শিল্পী জানান, নিজেদের কিছু দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সম্প্রতি ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজকে বাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি নজির সৃষ্টি করেছেন, তাদের আশা, দেশের জনগণের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনোভাবও প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারবেন।

কর্মসূচিতে এ পর্বটি উপস্থাপনা করেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি জানান, ‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের ১৩টি সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) আয়োজিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গত কয়েকদিন বিভিন্ন পর্যায়ে সভা-আলোচনা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও। কিন্তু তার কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ার হতাশা ব্যক্ত করে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার সময় তার শারীরিক ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে হয়তো তিনি এসব সবই জানেন, সবই বোঝেন, সবই তার জানা আছে, পাঁচ দফা দাবিও তার আগে থেকে জানা ছিলো। অথবা তিনি এমন একটা ভাব করেছিলেন যে বিষয়গুলো শুনতেই চান না।

যোগ করে শহীদুজ্জামান সেলিম আরও বলেন, ‘আবেগের জায়গা থেকে আমরা সবাই একমঞ্চে দাঁড়িয়েছি। অভিনয়শিল্পীদের মনে অনেক কষ্ট। এর ক্ষোভগুলো কোথাও একত্রে প্রকাশ করার জায়গা নেই। সেরকম একটি জায়গায় আজকে আমরা কথাগুলো বলছি। আমাদের আন্দোলন সফল না হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করবো। তাকে আমাদের দুঃখের কথা বলবো। আমরা মন্ত্রণালয়ে গেলে আমাদেরকে নানানরকম আইন-কানুন দেখানো হয়। কিন্তু মিরাজকে বাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ কিংবা সৌম্য সরকারের বাবার বদলি বাতিল হওয়ার নজির আমরা দেখেছি। এগুলো কিন্তু কোনো আইনে নেই। সুতরাং আমাদের আশা, সংস্কৃতিবান্ধব বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী অভিনয়শিল্পীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। ’

বিদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে বিদেশিরা বিভিন্ন চ্যানেলে উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, সেট ডিজাইনার হিসেবে অনেকে কাজ করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তার ভাষ্য, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাসের এতোই অভাব হয়ে গেছে বাংলাদেশে যেন কোনো নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক নাই! আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ’

এক্ষেত্রে সমাবেশে তোলা পাঁচ দফা দাবির মধ্যে শহীদুজ্জামান সেলিম মনে করিয়ে দিয়েছেন চার নম্বর দাবির কথা- দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে কাজ করতে হলে সরকারের অনুমতি এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠন সমূহে নিবন্ধিত হতে হবে। তার ভাষ্য, ‘আমরা চাই, সরকার যেন বিদেশিদের রাজস্ব থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়। ’

অন্য চারটি দাবির মধ্যে তিনটি নিয়ে কথা বলেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। এগুলো হলো- দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল/অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে হবে। টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট/এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতিত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।

সম্প্রতি এফটিপি’ওর কাছে টিভি চ্যানেলগুলো বলেছে, বাংলায় ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল চালানোর জন্য তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করছে এজেন্সিগুলো। না চালালে অন্য কোনো অনুষ্ঠানে তারা বিজ্ঞাপন দেবেন না বলে হুমকি দেন। তাই বাধ্য হয়ে বিদেশি সিরিয়াল চালানো হচ্ছে।

নিজেদের অনুষ্ঠান, কলাকুশলী ও শিল্পীদের প্রতি চ্যানেলের কোনো আস্থা না থাকার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তার কথায়, ‘ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি সিরিয়ালের আদলে সাজসজ্জা করে কাতান শাড়ি পরিয়ে আমাদের মেয়েদেরকে দিয়ে সিরিয়াল বানানোর অনুকরণ তৈরি হয়েছে। বানর মানুষকে অনুকরণ করে, কিন্তু বানর বানরই থেকে যায়, কখনও মানুষ হতে পারে না। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এ ধরনের অপসংস্কৃতি যারা এদেশের নিয়ে আসছে। কারণ এজেন্সির কাছে তাদের হাত-পা বাঁধা পড়ে গেছে। তারা মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান ও যুগোপযোগী নাটক তৈরি করতে পারছে না। আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে এ ধরনের চর্চা শুরু হয়েছে। আমরা এ জাতীয় চর্চার প্রতি অত্যন্ত ঘৃণা জানাই। পণ্য ভালো হলে বাজার সেটার পেছনে দৌড়ায়। পণ্য কখনও বাজারের পেছনে ছোটে না। ’

ফরমায়েশি নাটক নির্মাণের প্রবণতাও তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তার দাবি, দশ বছর ধরে একইরকম নাটক হচ্ছে দেশে। একই ধরনের নাটক করে শিল্পীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, নব্বই দশকে বেসরকারি নাটক প্রচার শুরুর সময় বাজেট ছিলো তিন লাখ টাকা। সেগুলো বিক্রি হয়েছে ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়ও নাটক বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ৩০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয় আয়কর। তাই পাঁচ দফা দাবির মধ্যে থাকা টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এ.আই.টির নূন্যতম ও যৌক্তিক হার পুনঃনির্ধারণের ওপর জোর দেন তিনি।

বাজেট কমে যাওয়ায় শিল্পীদেরকে গড়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার ওপরে পরিশ্রম করানো হয় বলে ব্যাখ্যা করেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘একজন শ্রমিকও আট ঘণ্টা কাজ করে। কিন্তু আমাদের শিল্পীদেকে দিয়ে তিন দিনের কাজ দুই দিনে করার অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই যে চাপ, এ চাপ এসেছে বাজেট থেকে। টিভি চ্যানেল ও এজেন্সিগুলো নিজেদের স্বার্থে এটা করছে। ’

অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী বলেন, ‘নাটকের বিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো টিভি কর্তৃপক্ষই এক বর্ণও শিল্পীদের কথা ভাবেননি। তারা তাদের ইচ্ছামতো নিজের ব্যবসাকে মাথায় রেখেই চ্যানেল চালিয়েছেন। তারা একবারও ভাবেননি শিল্পীগুলো কোথায় যাবে, তারা কীভাবে চলবে এবং শৈল্পিক মান কোথায় নামাচ্ছি? শিল্পীদেরকে সবখানেই লাগে, লাগবে। আমরাও থাকবো। কিন্তু যে কোনো কিছু করার আগে শিল্পীদের কথা ভেবে শৈল্পিক বিবেচনা করবেন এবং দেশকে ভালোবাসবেন। তাহলে পরনিন্দা, পরচর্চা এবং পরের দিকে আর তাকানোর প্রয়োজন পড়বে না। ’

আরেকটি অসম বাণিজ্যের কথা জানাতে ভোলেননি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতীয় সমস্ত চ্যানেল এখানে দেখতে পারি বৈধভাবে ও অবৈধভাবে। মাত্র তিন লাখ টাকায় একটি বিদেশি চ্যানেল নিবন্ধন করে দেখানো যায় বাংলাদেশে। সেখানে আমাদের কোনো চ্যানেল পার্শ্ববতী দেশে যদি দেখাতে চাই তাহলে আমাদেরকে পাঁচ কোটি রুপি নিবন্ধন ফি ও প্রতি মাসে আড়াই কোটি রুপি দিতে হয়। এই যে অসম যুদ্ধ ও বাণিজ্য, আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। ’

নিজের বক্তব্যে তৌকীর বলেছেন, ‘নব্বইয়ের দশকে এ দেশের নাটক ভারতেও দেখতো। সেই নাটক দেখার জন্য ওপার বাংলায় ডিশ এন্টেনা লাগানো হতো। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বাংলা ভাষাভাষি সবাই আমাদের নাটকের ভিএইচএস ক্যাসেটে কিনতো। পরবর্তী সময়ে সিডিতে ও ডিভিডিতে কিনতো। ’ এর রেশ ধরে চ্যানেলগুলোর প্রতি শহীদুজ্জামান সেলিমের আহ্বান- ‘আপনারা ভালো কনটেন্ট নিয়ে কাজ করুন। ভালো নাটক ভালো দামে কিনুন। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও অঙ্গীকারের কোনো অভাব থাকবে না। অভিনয়শিল্পীরা কমিটমেন্ট থেকে ভালো কাজ ও অভিনয়ের জায়গা চায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবার আমাদের নাটক বিদেশেও দেখবে। ’

ভারতীয় চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন যারা প্রতারণা করে পাচার করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে তুলে ধরার হুমকি দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তার দৃঢ় উচ্চারণ- ‘অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করতে যতো শক্তিশালী হাতই হোক না কেনো, আমাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা আছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।