ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

সাক্ষাৎকার পুনঃপ্রকাশ

‘আমি হচ্ছি ফ্রি বার্ড’

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
‘আমি হচ্ছি ফ্রি বার্ড’ হুমায়ূন সাধু। ছবি: রাজীন চৌধুরী/ বাংলানিউজ

মাসখানেক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মেনেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে বাংলানিউজ কার্যালয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন হুমায়ূন সাধু, জানিয়েছিলেন সেসময়কার কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।  তাকে স্মরণ করে পাঠকদের জন্য আজ আবার পুনঃপ্রকাশ করা হলো সেই হৃদয়খোলা আলাপচারিতা।

বাংলানিউজ: অভিনয়, নির্মাণ ও লেখালেখি-কোন কাজটি করতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
হুমায়ূন সাধু:
 অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কোনও কারণই নেই।  অবশ্যই লেখালেখিটা আমার কমফোর্ট জোন। আর পরিচালনাটা হলো স্বপ্ন। তাই বলতে পারেন লেখালেখি ও নির্মাণ আমাকে বেশি টানে।

বাংলানিউজ: এখন কী নিয়ে আপনার ব্যস্ততা?
হুমায়ূন সাধু: 
আমি হচ্ছি ফ্রি বার্ড। যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করি। তবে লেখালেখিটা নিয়মিত চলছে। আর অভিনয় সময়-সুযোগ পেলে করি। প্রথমবার সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। বলতে পারেন এটি নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ত।

বাংলানিউজ: সিনেমার নাম কী?
হুমায়ূন সাধু:
 সিনেমার নাম বা গল্পের প্লট কোনটাই এখন বলতে চাচ্ছি না। কারণ এর আগে আমার একটা গল্পের ধারণা ও নাম চুরি হয়েছে। তাই পুরোপুরি শুরু না করে এখন কিছুই বলতে চাচ্ছি না। তাছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও সেটা চায় না।

বাংলানিউজ: সিনেমার কাজ কতটুকু এগিয়েছে?
হুমায়ূন সাধু:
 সিনেমা নির্মাণ করবো, সেটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। এই গল্পটা আমার, স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। রোমান্টিক সিনেমা হবে এটি, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্যই বানাবো। মোটামুটি সবকিছু রেডি, কিন্তু সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রের শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে সময় লাগছে। তাই শুটিং শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে, আশা করছি চলতি বছরই সিনেমার শুটিং শুরু করতে পারবো।

হুমায়ূন সাধু।  ছবি: রাজীন চৌধুরী/ বাংলানিউজ

বাংলানিউজ: আপনি নিজের কাজ খুব কম প্রচার করেন। এর কারণ কী?
হুমায়ূন সাধু: 
আমার কাজগুলো আমি ফেসবুকে কিংবা ইউটিউবেও দেই না। আমার মনে হয়, যে কাজগুলো করেছি তা কিছুই হয়নি। আমার ভালো একটা গল্প ছিল এবং ভালো একটা প্ল্যানিং ছিল। কিন্তু আমি তার কিছুই করতে পারিনি। তাই অনলাইন প্রচারণা থেকে বিরত থাকি।

বাংলানিউজ: ঈদে আপনার কী কী কাজ আসছে?
হুমায়ূন সাধু:
 আমি কিছু ওয়েব সিরিজের স্ক্রিপ্ট করছি ও নির্মাণেরও কথা চলছে। তবে চূড়ান্ত হয়নি। কোনো নাটক আসছে না। তবে, কিছু নতুন বিজ্ঞাপন দর্শক দেখতে পাবেন।

বাংলানিউজ: ২০১৭ সালের ঈদে আপনার পরিচালিত নাটক ‘চিকন পিনের চার্জার’ বেশ প্রশংসা পায়। এরপর আর আপনাকে পরিচালনায় দেখা যায়নি কেন?
হুমায়ূন সাধু:
 অনেক কাজের কথা হয় কিন্তু তা আলোচনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে নাটকের চেয়ে আমি সিনেমা মনোযোগ দিয়ে করতে চাই। আমাদের নাটকে গল্প ও মেকিংয়ে যে পরিমাণ এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, সিনেমায় তার ১০ ভাগও এখন পর্যন্ত হয়নি। অথচ এই এক্সপেরিমেন্ট সিনেমায় হওয়া উচিত। তাই আমি সিনেমাটা ভালোভাবে করতে চাই।

বাংলানিউজ: কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ কার কাছ থেকে পান?
হুমায়ূন সাধু: 
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী হচ্ছেন আমার মায়েস্ত্রো। তার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও ভালোবাসা পাই, তিনিই আমার সব।  এরপর আরও চারজনের নাম বলতেই হয়। তাদের মধ্যে ইরেশ জাকের ভাই ও মোশাররফ করিম ভাই- দু’জন আমার স্ট্রাগল লাইফে আমাকে মনে রেখেছেন, ভালো আইডিয়া, সাপোর্ট ও উৎসাহ দিয়েছেন। বর্তমানে হিমু আকরাম ভাই ও স্বাধীন খসরু ভাইয়ের সঙ্গে কাজ হচ্ছে। তাদের সঙ্গেই ভবিষ্যতে আরও বড় বড় কাজ হবে।

বাংলানিউজ: ‘ননাই’র পর আপনার কী কী বই আসছে?
হুমায়ূন সাধু:
 বই বের করবো সেটা আসলে আগে পরিকল্পনা ছিল না। হুট করেই হয়ে গেছে। ‘ননাই’ বের করার পর বেশ কয়েকটি প্রকাশনী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এখন দু’টি পাণ্ডুলিপি তৈরি করা আছে। হয়তো এগুলো বই আকারে বের হবে।

বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হুমায়ূন সাধু:
 আপনাকে এবং বাংলানিউজের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ূন সাধুর প্রথম ব্রেন স্ট্রোক হয়। এরপর তাকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) তাকে বিদেশে নিয়ে অস্ত্রোপচারেরও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রোববার (২০ অক্টোবর) দিনগত রাত ২টার দিকে হঠাৎ সাধুর দ্বিতীয় ব্রেন স্ট্রোক হয়। এরপরই তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফিরে আসা হয়নি জনপ্রিয় এ নির্মাতা-অভিনেতার।

হুমায়ূন সাধুর শোবিজে পথ চলা শুরু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে।  ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সিনেমা দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয় তার। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, নাটক নির্মাণ করেও প্রশংসিত তিনি।

সাধু অভিনীত ‘ঊন মানুষ’ এবং পরিচালিত ‘চিকন পিনের চার্জার’ নাটক ব্যাপক আলোচিত হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার প্রথম বই ‘ননাই’। একটি সিনেমা নির্মাণের কাজও হাতে নিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়, নির্মাণ ও লেখালেখি-তিনটিই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ‘ঊন মানুষ’খ্যাত এ তারকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।