মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনার মতোই বিনোদন জগতে আছড়ে পড়ে তাপস পালের মৃত্যুসংবাদ। সাধারণ মানুষ যতটা হতবাক, প্রসেনজিৎও তাই।
তবু টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে প্রসেনজিতের পাঠানো বার্তা থেকে। ‘বাংলা ছবি যে সময়টায় একজন দক্ষ অভিনেতার অভাব অনুভব করছিল, ঠিক সেই সময়েই তাপসের ‘গুরুদক্ষিণা’ মুক্তি পেল। আমাদের দু’জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। বাংলা সিনেমা আজ এক নক্ষত্রকে হারালো। আর আমি একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারালাম। ’
আশির দশকে বাংলা সিনেমার নায়ক বলতে চিরঞ্জিৎ-তাপস-প্রসেনজিৎ। কখনও তারা একসঙ্গে সিনেমা করেছেন, কখনও অন্যের শুটিংয়ে ঢুঁ মেরে যাচ্ছেন, কখনও বা নির্ভেজাল আড্ডায় বসেছেন।
এই প্রজন্মের অভিনেতাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রসেনজিৎ একবার বলেছিলেন, ‘এখনকার অভিনেতাদের মধ্যে বাঁধন দেখি না। হয় সকলেই সকলের বিরুদ্ধে, নয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখনদারির পিঠচাপড়ানি। আমাদের সময়ে এটা ছিল না। পর্দার বাইরেও তাপস-আমি ভাল বন্ধু ছিলাম। কোনও আলোচনা হয়তো একটা জায়গায় থেমেছিল, অনেক দিন পরে দেখা হলে ঠিক সেখান থেকেই শুরু হতো। আমাদের দেখলে কেউ ভাবতো, এরা বোধহয় রোজ আড্ডা দেয়। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও, দু’জনেই দু’জনের খবর রাখতাম। ’
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ছাপিয়ে প্রসেনজিৎ বন্ধুত্বের কথা বললেও, ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য গুঞ্জন শোনা যেত সে সময়ে। বলা হত, প্রসেনজিৎ যেভাবে নিজের ক্যারিয়ার বিস্তার করেছেন, তাতে অন্যরা খানিকটা কোণঠাসা হয়েছেন। এর জন্য তাপস নিজেও খানিক দায়ী বলে মনে করেন ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞরা।
রাজনীতিতে আসার কারণে ইন্ডাস্ট্রির অনেকের সঙ্গেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাপস পালের। এর উপর আলোচিত রোজ়ভ্যালি কাণ্ড, জনসমাবেশে ধর্ষণের হুমকি, জেলে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা তাপসকে আরও প্রান্তিক করে দিয়েছিল। সে সময়ে প্রসেনজিৎও হয়তো তাকে এড়িয়ে গেছেন। এমনিতেও তিনি রাজনীতি-বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু মৃত্যু আজ তাকে ভারাক্রান্ত করেছে। তাই অকপটে বললেন, ‘তাপস আমার চেয়ে অনেক বড় স্টার ছিল। চিরকাল থাকবেও। ’
প্রসেনজিৎ যেভাবে নিজের ক্যারিয়ার সাজিয়েছেন, নিজেকে যেভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাপস পাল কোনও দিনই তেমনটা ছিলেন না। ক্যারিয়ারের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন। শরীরও সঙ্গ দিচ্ছিল না। প্রসেনজিতের মতে, তাপস বড় খামখেয়ালি। শরীরের দিকে নজর দিত না। প্রসেনজিৎ নিজেও তাপসকে সাবধান করেছেন বহুবার।
ইন্টারনেটের তথ্য বলছে, অনুপ সেনগুপ্তের ‘মায়ের আঁচল’-এ তাপস-প্রসেনজিৎ শেষ বারের মতো একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। তবে সহকর্মীর বিদায়বেলায় স্মৃতিও এলোমেলো হয়ে গেছে প্রসেনজিতের। তাদের শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রসেনজিৎ ছোট পর্দার জন্য ‘মহানায়ক’-এর শুটিং করছিলেন। সেই স্টুডিওতেই চলছিল তাপসের ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’ ধারাবাহিকের শুটিং। ‘ওই সময়ে মেকআপ রুমে বসে আমরা অনেকক্ষণ আড্ডা মেরেছিলাম। ’ তখনও ভাবেননি, সেই আড্ডাই হবে শেষ আড্ডা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এমকেআর