ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বাবা দিবস

বাবার শরীরে নিজেকে আড়াল করে হেঁটে চলতাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২০
বাবার শরীরে নিজেকে আড়াল করে হেঁটে চলতাম

ঘনিষ্ঠতা মায়ের সঙ্গেই বেশি। বাবা শেষ ঢাল হিসেবে থেকেছে আজীবন। ছোটখাটো সমস্যা বা চাওয়াগুলোর জন্য মা আর জটিল সব পরিস্থিতিতে বাবা। পাড়ার মধ্যে গান শেখাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ত্বটি ছিলো মায়ের, বাবা নিয়ে আসতো ঢাকায়।

কতো প্রতিযোগিতা করলাম বাবা মেয়ে একসঙ্গে! 'নতুন কুঁড়ি'র সময় আমি মফস্বলের এক ভীরু বালিকা। বাবার হাত ধরে হাঁটতাম, বাবার শরীরে নিজেকে আড়াল করে পাশে পাশে হেঁটে চলতাম।

অন্য বাবাদের দেখতাম, কী প্রভাব, কী আত্মবিশ্বাস! নিজের গাড়ি হাঁকিয়ে একেবারে বিটিভির ভিতরে ঢুকে পড়তো।  দেখে মনে হতো- যেন তাদেরই প্রতিষ্ঠান। খুব চেনা, খুব জানা।

পুতুলতাদের দেহভঙ্গি দেখে মনে হতো, গাইবার আগেই মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে! আর আমার বাবা! শান্ত নিরীহ মুখ নিয়ে অপেক্ষা করতো বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে।  ফলাফল নিয়ে বাকি মেয়ের বাবাদের সে কী হইহুল্লোড়! বাবা সেই হুল্লোড়ে ঢুকতো না। এক কোণে চুপ করে বসে থাকতো। এমনভাবে বসতো যে, তার উপস্থিতিই যেন কারো দৃষ্টিগোচর না হয়।

দেশের গানের প্রতিযোগিতা নতুন কুঁড়িতে, ছোট্ট পাড়া থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মিলনায়তন। বাইরে বাবার অপেক্ষা। ফলাফল ঘোষণার সময় বাইরে একটা গুঞ্জন উঠলো, সাজিয়া সুলতানা নামের মেয়েটা প্রথম। প্রভাবশালী বাবারা আনুষ্ঠানিক ফল আসবার আগেই খবর নিয়ে নিয়েছেন। বাবার কানে কিন্তু সেই ফিসফাস পৌঁছে নি।

বাবা যথারীতি কোনো এক কোণে প্রতীক্ষায় আছেন আমার। মিলনায়তনের ভীড় ভাঙলো। বেরিয়ে আসছি প্রতিযোগিরা। বাবাকে ফলাফল জানানোর জন্য মনের ভিতর উত্তেজনার বুদবুদ উঠছে।  সবাই ঘিরে ধরেছে। তুমি সাজিয়া সুলতানা? কী গেয়েছিলে? প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে গিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। বাবার কাছে পৌঁছতে হবে। সবার বাবাকে দেখা যায়। আমার বাবা নেই। দীর্ঘ  করিডোরের শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা পেলাম।  

কেমন একটা জড়ানো জড়ানো স্বরে বাবা, 'কী রে বাবা?' ফলাফল কী, এই কথা জিজ্ঞাসা করার সাহস সম্ভবত ততোক্ষণে বাবা হারিয়েছে।  

'প্রথম'।  
'কী? ফার্স্ট হয়েছিস?' 

আমিও সিনেমার মতো দূর থেকে দৌঁড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফলাফল বলি নি। বাবাও ফলাফল শুনে সিনেমাসুলভভাবে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খায় নি। কিন্তু গর্বে তার বুক কতোটা স্ফীত হয়েছে, তা যেন তার জামার উপর থেকেই দেখতে পেয়েছিলাম।  

সেদিনের সেই নিভৃত গর্বগুলোই এখন প্রকাশ্যে এসেছে। 'আমি পুতুলের বাবা বলছি', এ কথাটি এখন যখন বাবাকে স্বর চড়িয়ে বলতে শুনি, তখন মনে মনে বলি, এটুকুতে এতো গর্বিত হয়ো না বাবা। তোমাকে আরো অনেক গর্ব এনে দেবো। শুধু কথা দাও, সেদিনটাতে তুমি থাকবে।  
মাকে নিয়ে বেশ লিখতে পারি। বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলেই কেমন খেই হারাই। ছোট ছোট কথামালায়, পঙক্তির পর পঙক্তি সাজিয়ে কবিতা লিখে ওঠা হয় না, হয় নি কোনো গানও। তাকে আঁকতে হয় আরো বিস্তৃত ক্যানভাসে। আমার উপন্যাস 'জ্যোৎস্নারাতে বনে যেভাবে আমাদের যাওয়া হয়ে ওঠে না' তে পুরোটা জুড়েই বাবাকে আঁকার চেষ্টা করেছিলাম। আমার ভবিষ্যৎচেষ্টাগুলো দেখতে বাবা তুমি থাকবে তো?

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২০
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।