শিল্পীর বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেন।
এন্ড্রু কিশোরের ছেলে ও মেয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা রয়েছে; তবে শিল্পীর ছেলে-মেয়ে আসলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আপাতত তার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।
দেশে ফোরার পর এই প্লেব্যাক সম্রাট রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকা তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন। তার ওই বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই সেবা-সুশ্রুষা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের।
তবে রোববার (৫ জুলাই) থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাই এন্ড্রু কিশোরের সুস্থতায় প্রাণ খুলে দোয়া করার জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু।
এরপর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটনায় সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে বাড়িতে রেখেই তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এদিন সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু জানান, দেশে ফিরলেও এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। রোববার (৫ জুলাই) সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তিনি। বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছিল।
শফিকুল আলম বাবু আরও জানান, প্রায় ৯ মাস পর সিঙ্গাপুর থেকে গত ১১ জুন দেশে ফেরেন সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০ জুন থেকে তিনি রাজশাহীতে ছিলেন। তবে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।
দেশে ফিরে কিছুটা সময় কোলাহলমুক্ত সময় কাটাতে চেয়েছেন। তাই ফেরার খবরটি এতদিন কাউকে জানাননি। এ প্রসঙ্গে এন্ড্রু কিশোর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, কয়েক দিন হলো দেশে এসেছি। কিছুটা সময় একান্তে থাকতে চেয়েছি। তাই পরিবারের বাইরে কাউকে জানাইনি। তাছাড়া শরীরের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। ডাক্তার কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোলাহলমুক্ত থাকতে হবে—সেই নির্দেশনা মেনেই চলছি।
চেকআপের জন্য তিন মাস পর পর তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ৯ সেপ্টেস্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। ছয়টি ধাপে তাকে মোট ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, কয়েক মাস পরপর নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে তাকে। এর আগে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে ফেরা হয়নি তার। অবশেষে গত ১১ জুন বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি।
১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’সিনেমার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের।
এন্ড্রু কিশোরের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি ‘গো ফান্ড মি’ নামে এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সহশিল্পীদের মধ্যেও অনেকে তার পাশে দাঁড়ান।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০
এসএস/এমজেএফ