সেখানে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাখা হয়েছিল এন্ড্রু কিশোরের মরদেহবাহী কফিন। এর ওপর সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
প্রথমেই শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী শ্রদ্ধা জানান।
সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরু। বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে থেকে কফিনে করে এই শিল্পীর মরদেহ নিয়ে আসা হয় রাজশাহী সিটি চার্চে, এরপর শুরু হয় প্রার্থনা। প্রর্থনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বর্তমানে তার মরদেহ সমাহিত করার জন্য চার্চের অদূরে থাকা সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন তাকে সমাহিত করা হচ্ছে।
শিল্পীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বরিশাল থেকে ফাদার বিশপ সৌরভকে নিয়ে আসা হয়েছে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য। বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে এই প্রার্থনা অনুষ্ঠান। এরপর কিছুক্ষণের জন্য চার্চের বাইরে তৈরি করা একটি মঞ্চে রাখা হয় সকলের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। শেষ বিদায়ের ওই মঞ্চটি স্ত্রী-সন্তানরা নিজ হাতে করেছেন। এখন বাংলাদেশ চার্চের কবরস্থানে শিল্পীর পছন্দের স্থানেই তাকে সমাহিত করা হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি চার্চের প্রার্থনা ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে এন্ড্রু কিশোরের সহধর্মিণী লিপিকা এন্ড্রু, তার বড় মেয়ে বড় মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা, ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক, বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাস, বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসসহ অাত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, ভক্ত অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে চার্চে দু’ঘণ্টার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শিল্পীর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান বাতিল করেছে পরিবার।
এদিকে, এন্ড্রু কিশোরকে যে সিমেট্রিতে (কবরস্থান) সমাহিত করা হবে, সেখানে তার বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মা মিনু বাড়ৈকেও সমাহিত করা হয়েছিল। তবে কিশোরের সমাধি হচ্ছে তার দেখিয়ে দেওয়া জায়গায়। যেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সমাধি সামান্য একটু দূরে।
শিল্পীর বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতি বছর ১ নভেম্বর খ্রিস্টানরা সমাধিস্থলে যান এবং প্রয়াত স্বজনদের আত্মার মুক্তির জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন। ২০১৭ সালের এমন এক দিনে এন্ড্রু কিশোর আমাকে নিয়ে সিমেট্রিতে গিয়েছিল। প্রার্থনা শেষে সিমেট্রিটা ঘুরে দেখেছিল। পরে একটা মনোরম স্থান পছন্দ করে আমাকে বলেছিল যে সে যখন মারা যাবে, তখন যেন তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। সেই জায়গাতেই তার সমাধির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিমেট্রিতে ঢুকে হাতের বা পাশেই সেই জায়গা। শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেখানে সমাধিস্থ করা হবে তাকে। আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একসঙ্গে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে। ’
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া এন্ড্রু কিশোর প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পী ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই ছিলেন চিকিৎসার জন্য।
কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয়দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর ২০ জুন তিনি রাজশাহীতে বড় বোনের বাসায় গিয়ে ওঠেন। ওই বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই জীবনের শেষ সসময় পর্যন্ত সেবা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের।
আর গত ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় থাকা বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। এরপর তার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। ছেলে-মেয়ের অপেক্ষায় ১৫ জুলাই এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করে পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
এসএস/এফবি