ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

বিনোদন

মেধাস্বত্ব ইস্যুতে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান সঙ্গীতশিল্পীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
মেধাস্বত্ব ইস্যুতে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান সঙ্গীতশিল্পীদের

ঢাকা: সঙ্গীতের মেধাস্বত্ব ইস্যুতে চলচ্চিত্র প্রযোজক বা সংগীত প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা যেন সঙ্গীতশিল্পীদের ঠকাতে না পারেন, সেজন্য কপিরাইট অফিসের আরো কঠোর ভূমিকার আহ্বান এসেছে কপিরাইট অফিসের এক সেমিনার থেকে।

বুধবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তনে ‘সঙ্গীত বিষয়ক মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় অংশীজনদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিয়ে সঙ্গীতশিল্পীরা বলেছেন, বাংলাদেশ গীতিকার, সুরকার ও পারফরমারস সোসাইটি-বিএলসিপিএসকে সংগঠিত করে তারা মেধাস্বত্ব ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।

রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট দাউদ মিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে অংশ নেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন-বামবার সভাপতি হামিন আহমেদ, দলছুটের বাপ্পা মজুমদার, ফুয়াদ নাসের, মনির খান, প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার, নূরজাহান আলীম, পলাশ, ফুয়াদ নাসের, আলী সুমন, ইমরান মাহমুদুল, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, নেমেসিস ব্যন্ডের রকিবুন নবী, সাকিব চৌধুরী, অয়ন চাকলাদার, সুজন রাজা, অর্থহীনের মহান ফাহিম, পাওয়ার সার্জের জামশেদ চৌধুরী প্রমুখ।

মনির খান সভার শুরুতে অভিযোগ করেন, ‘আমি বহু বছর ধরে সিনেমায় গান গেয়েছি। এখন সেসব সিনেমার প্রযোজক গানগুলো নানা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পথেঘাটে নানা প্রান্তে আমার গান শুনি। অনেকে আমার গানগুলো গাইছেন। কেউ আবার সুর বিকৃত করেছেন। আমার গাওয়া সেসব গানের কপিরাইট বাবদ আমি তো কিছু পেলাম না। দুঃখজনক হলো, জীবনের শেষভাগে এসে আমার যখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না।

প্রবাদপ্রতিম লোকসঙ্গীতশিল্পী আবদুল আলীমের মেয়ে নূরজাহান আলীম বলেন, আমার বাবার গাওয়া গানগুলো এখন অনেক শিল্পী বিকৃত সুরে গাইছে। তারা কোথাও বাবার নামটিও বলছে না। আমরা তার সন্তানরা কীভাবে তার গানের র‌য়্যালিটি পাবো?

বাপ্পা মজুমদার বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে গানগুলো যত দ্রুত সম্ভব কপিরাইট করে ফেলা। এখন তো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘরে বসেই কপিরাইট নিবন্ধন সম্ভব। আর গানের র‌য়্যালিটি আদায়ের বিষয়টি আমাদের কারো একার কাজ নয়। সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী- তিন পক্ষকেই সমন্বয় করে কাজটি করতে হবে। ’

সঙ্গীতশিল্পীদের মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় ২০১৪ সালে সাবিনা ইয়াসমীনকে সভাপতি করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ গীতিকার, সুরকার ও পারফরমারস সোসাইটি-বিএলসিপিএস নামে সংগঠন। সঙ্গীতশিল্পীদের অধিকার নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই সংগঠনকেই কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (সিএমও) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এই সংগঠনটির সভাপতি হামিন আহমেদ বলেন, ‘কপিরাইট ইস্যু বা রয়্যালিটি- এই দুই ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে ওয়াইপো ও সিস্যাকের সঙ্গে আমাদের বিএলসিপিএসকে সম্পৃক্ত করতেই হবে। এরা কপিরাইটের আইনি বিষয় ও র‌য়্যালিটি আদায় নিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। দ্বিতীয়ত হল, কপিরাইট আইনে উল্লেখ থাকতে হবে যে একজন সঙ্গীতশিল্পী একজন প্রযোজক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিক কী পরিমাণ রয়্যালিটি মানি পাবেন। আমরা জানি, কপিরাইট আইনটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যালোচনার পর এখন পার্লামেন্টে শুধু পাস হওয়ার অপেক্ষায়। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত না, ঠিক কী বলা হয়েছে নতুন আইনে

রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট দাউদ মিয়া জানান, সঙ্গীতশিল্পীদের মেধাস্বত্ব নিয়ে এই সংগঠনটি কপিরাইট অফিসের সঙ্গে যেভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা ছিল তা করেনি। সিএমও নিয়মাবলীরও ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তারা।

দাউদ মিয়া বলেন, আইনি কাঠামোতে না থাকলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কপিরাইট অফিস স্পেশাল একটি টাস্কফোর্স পরিচালনা করে। যাদের কাজ হলো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেউ মেধাস্বত্ব আইনের লঙ্ঘন করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রাপ্য রয়্যালিটি বুঝিয়ে দেওয়া।

মনির খানের অভিযোগ প্রসঙ্গে দাউদ মিয়া বলেন, চলচ্চিত্রের গানকে আলাদা শিল্পকর্ম হিসেবে আগেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে সিনেমার গানকে প্রযোজক, সুরকার বা গীতিকার এককভাবে অন্য কোনো প্রযোজনা বা পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তিন পক্ষই লাভবান হবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।