ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

১৫ লাখের ‘আদিম’র মস্কো জয়: নির্মাতা জানালেন পেছনের গল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
১৫ লাখের ‘আদিম’র মস্কো জয়: নির্মাতা জানালেন পেছনের গল্প সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন যুবরাজ শামীম

মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৪তম আসরে সিলভার জর্জ অ্যাওয়ার্ড (স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড) এবং নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘আদিম’। শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিনেমাটির নির্মাতা যুবরাজ শামীমের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা যুবরাজ শামীম, অভিনেত্রী সোহাগী, অভিনেতা দুলালসহ অনেকেই কথা বলেছেন।  

সেখানে নির্মাতা যুবরাজ শামীম জানান, ‘আদিম’ একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। এর দৈর্ঘ্য ৮৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে এর মধ্যে নেই পরিচালকসহ কলাকুশলীদের সম্মানি। ৫০ জনের কাছে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।

মস্কোতে পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে শামীম বলেন, কোন ফাঁকে যে মস্কোতে পুরস্কার পেয়ে গেল বুঝতেই পারি নাই।  এখনও স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মস্কোতে যখন যাই এয়ারপোর্টে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু পুরস্কার প্রাপ্তির পর যখন ফিরি, তখন এয়ারপোর্টে অনেকেই সম্মান দেখিয়েছেন।

দেশে ফেরার পরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই নির্মাতা বলেন, পুরস্কার জিতে দেশে ফেরার পর যেটা ভালো লেগেছে, সেটা হলো- আমার আশপাশের মানুষ বা, এলাকার মানুষ, যারা আমাকে তেমন গুরুত্ব দিত না তারা আমাকে দেখে সমীহ করছে। এ জয়কে তারা নিজেদের জয় বলে মনে করছে। মস্কোর জয়ের চেয়ে এ বিষয়টি আমার কাছে কোনো অংশে কম না।  

‘আদিম’র গল্পের প্রসঙ্গে ছোট করে শামীম বলেন, ল্যাংড়ার ভাসমান জীবন। খুনের দায় এড়াতে সে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। যেখানেই যায় সেখানেই সে নতুন মানুষের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়ায়। এমনই একদিন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে কালা এবং কালার স্ত্রী সোহাগীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। যে পরিচয় ল্যাংড়ার জীবনে নানারকম জটিলতার জন্ম দেয়।

এই নির্মাতার ভাষ্যে ‘আদিম’ নির্মাণের পেছনের গল্প এমন, ২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রথম আদিম নির্মাণের ভাবনা মাথায় আসে এবং হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়েই আদিম নির্মাণের পরিকল্পনা করি। ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের নির্মাতা ক্লিমেনটিনে এডারভিন আমার ভাবনা শুনে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ২০০ ইউরো আমার হাতে ধরিয়ে দেন। যা আমাকে আদিম নির্মাণে প্রথম সাহস জোগায়। সিনেমার বাকি টাকা আমি আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে ধার নেয়ার চিন্তা করি। পরে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করি। বহু পরিচিত অপরিচিত মানুষ আমার শেয়ার কিনেছে।  

‘আদিম’ সিনেমায় কোনো প্রফেশনার শিল্পী অভিনয় করেননি। টঙ্গির বস্তির মানুষদের নিয়েই সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শামীম বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমার বস্তির দিন কাটে, মাঝেমধ্যে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ি। কিন্তু ধীরে ধীরে বস্তির কয়েকজন মানুষের সঙ্গে আমার সখ্যতা তৈরী হয় এবং আমি সিদ্ধান্ত নেই বস্তির মানুষজন নিয়েই আদিম চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবো। এরপর চরিত্র বাছাই ও রিহার্সেল করানো হয়। তবে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অর্জন এবং দেশের মানুষের ভালোবাসা ‘আদিম’র নির্মাণের সকল যন্ত্রণা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে।

সিনেমাটি বাংলাদেশে কবে মুক্তি পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, সিনেমাটির মুক্তি দেওয়া নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমিও জানি না সিনেমাটি কবে মুক্তি পাবে। আমি তো পরিচালক-প্রযোজক সমিতির সদস্য নই। ওখানকার সদস্য হতে যে টাকা লাগে সেটাও নেই। যদি তারা কোনো টাকা ছাড়া আমাকে সদস্য করে নেয়, তাহলে খুব ভালো হয়। দেখি তারা আমাকে কোনও ছাড় কিংবা সুযোগ করে দেন কিনা। আশা আছে, যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে সিনেমাটি দেখাবো।

‘আদিম’ ছাড়াও আরো একটি সিনেমা নির্মাণ করছে যুবরাজ শামীম। তিনি জানান, ‘অতল’ নামের সেই সিনেমার কাজ মস্কো যাওয়ার আগেই ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করেছেন। বাকি কাজ শিগগিরই শেষ করবেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্ব ০৮, ২০২২
এনএটি

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ‘আদিম’র মস্কো জয়

আরও পড়ুন: মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে ‘আদিম’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।