মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অবাধে চলছে পাখি শিকার। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কোনভাবেই থামছে না পাখি শিকার।
হাওর পাড়ে বসবাসকারী স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, শীতকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। এ সব পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর বিলগুলো। হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতে হাওরে অতিথি পাখি আসার সাথে সাথে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, প্রতি বছর শীত প্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি আসে। যেমন- গুটি ঈগল, ধলা-বালি হাঁস, ভুতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, কাস্তেচরা, কুড়া ঈগল, পাতি-সরালি হাঁস, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি। বিদেশি পাখির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে এ হাকালুকি হাওরে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) হাকালুকি হাওরের তুরলবিলে গেলে বিলের পাশের মনিষ রাখাল বেলাগাও গ্রামের মুজিবুর রহমানের বাসায় বস্তা বন্দী বেশ কিছু পাখি পাওয়া যায়। তখন রাখাল মুজিব বাসায় ছিলেন না। তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়া গ্রামের নজু মিয়ার ছেলে হোসেন মিয়া বিষটোপ দিয়ে পাখিগুলো ধরে জবাই করে তার বাসায় রাখে।
তিনি আরও জানান, নাগুরা বিলের ইজারাদার ফয়াজ মিয়া সকালে আরো বেশ কিছু জীবিত পাখি শিকারীর হাত থেকে উদ্ধার করে বিলে ছেড়ে দেয়। পরে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাখি শিকারি হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সে পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে বস্তার ভিতরে থাকা পাখিগুলো স্থানীয় কয়েকজন সহ সাংবাদিকরা মিলে বিলের পারে মাটি চাপা দেন।
পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, অবাধে পাখি শিকারের কারণে হাওরে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। পাখি রক্ষায় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগের লোকবল সংকটে রয়েছে। অবিলম্বে বন বিভাগের লোকবল সংকটে নিরসন করে শিকার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, লোকবল সংকটে অনেক সময় পাখি শিকারিদের ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমাদের প্রধান অন্তরায় লোকবল সংকট। মাঝে মধ্যে আমরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের খবর পাই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসএম