ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘তল্লা আইড়’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘তল্লা আইড়’  তল্লা আইড় মাছের মুখমণ্ডল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলাভূমির একটি বিশেষ প্রজাতির সুস্বাদু মাছের নাম ‘তল্লা আইড়’। তবে অনেকে এ মাছটিকে ‘আইড়’ মাছ হিসেবে চেনেন।

অনেকেরই শৈশবের একটি প্রিয় মাছ এটি। সিলেট অঞ্চলে এ মাছটিকে ‘ঘাঘট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।  

অনেকেরই প্রিয় মাছগুলোর তালিকায় এই মাছটির স্থান সবার ওপরে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় এই মাছটি আর তেমন চোখে পড়ছে না।

দেশের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো মারাত্মকভাবে দখল আর দূষণের শিকার। ফলে প্রাকৃতিক মাছের জীবনও হয়ে পড়ছে বিপন্ন। মাছ আর ভাতের সঙ্গে বাঙালির প্রজন্মগত যে সুসম্পর্ক রয়েছে- তাও যেন আজ বিপন্ন হতে চলেছে।

বলাই বাহুল্য, আজকাল ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এই বিশেষ প্রবাদ বাক্যটি ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ প্রাকৃতিক জলাভূমির বেশিরভাগ দেশি মাছই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও যেসব মাছ পাওয়া যেতো সেগুলোর অনেকই আজ অতীত স্মৃতি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাদুপানির মাছ’র অ্যালবামের এই মাছটিকে ‘তল্লা আইড়’ নামে তালিকা করা হয়েছে। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Sperata seenghala. প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্য্য প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার।

সংকটাপন্ন প্রজাতির ‘তল্লা আইড়’ মাছ।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

সম্প্রতি তিনটি আইড় মাছ ভাড়ে করে নিয়ে আসেন স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী। মুহূর্তেই ওই মাছগুলো বিক্রি হয়ে যায়।

এ মাছটি সম্পর্কে স্থানীয় মাছ বিক্রেতা সিফিল মিয়া জানান, ঘাঘট মাছ বর্তমানে খুবই কম পাওয়া যায়। বাজারে আসা মাত্রই মাছটি বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। মাছটি কেজি প্রতি আটশ টাকা থেকে ১২শ টাকায় আমাদের বাজারে বিক্রি হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্তকর্তা মো. ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, এটির নাম ‘তল্লা আইড়’। তবে ‘ঘাঘট’ বা ‘আইড়’ নামেও এ মাছটি বহুল পরিচিত। এ মাছটি বর্তমানে ‘আইইউসিএন’ কর্তৃক বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রজাতিটি স্বাদু পানির মাছ। নদী-নালা, খাল-বিল, প্রাকৃতিক হাওর-জলাভূমিসহ পুকুর-ডোবাতে পাওয়া যেতো। তবে এখন এ মাছটি আগের মতো চোখে পড়ে না।

মাছটির প্রাপ্তিস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে এ মাছটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরা মূলত জুলাই-আগস্ট মাসে ডিম পাড়ে। এই মাছ সর্বভূক। ছোট ছোট মাছ, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, কেঁচো ইত্যাদি খায়।

তিনি আরো বলেন, মাছটি ‘সংকটাপন্ন’ এবং ঘাঘট মাছসহ দেশি প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করার উদ্যোগ নিতে পারলে এই মাছগুলো চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। যাতে আমাদের দেশের এই সুস্বাদু মাছগুলো টিকে থাকতে পারে আমাদের জলাভূমিগুলোতে। সেই লক্ষ্যেই ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন, মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন ও উন্নত জলাশয় ব্যবস্থাপনার ফলে এই মাছসহ প্রাকৃতিক জলাভূমির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা কিছুটা বেড়েছে।

মাছটি পানির নিম্ন স্তরের বসবাস করে। স্থানীয় বাজারগুলোতে এই মাছটির চাহিদা প্রচুর। বৃহত্তর সিলেট এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের নদী, বিল এবং হাওরের এক সময় মাছটি পাওয়া যেত।  বর্তমানে মাছটি কম পাওয়া যায় বলে জানান ওই সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।