চবি থেকে ফিরে : দেশে যত প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ আছে তার ৬০ ভাগেরও বেশি প্রজাতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাওয়া গেলেও এগুলো রক্ষায় নেই কোনো সমন্বিত প্রয়াস। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এসব ভেষজ উদ্ভিদের অস্তিত্ব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটু উদ্যোগ নিলেই চবি হতে পারে ভেষজ উদ্ভিদের সবচেয়ে বড় সংরক্ষণাগার।
চবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১২শ’ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫০ প্রজাতিই রয়েছে চবিতে। এখন পর্যন্ত চবিতে রেকর্ড করা হয়েছে ৭৩৭টি প্রজাতি। এর মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি রয়েছে ৮০টির মতো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চবির বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য তৈরি প্লটটি রয়েছে অযত্নে। এর পাশে আবাসিক কলোনিও গড়ে উঠেছে। নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে প্লটটির দশা এমন হয়েছে যে আলাদাভাবে চেনাও যাচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এই প্লটটির ওপর দিয়েই কলোনিতে বসবাসকারীরা যাতায়াত করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ভেষজ উদ্ভিদ।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ভেষজ উদ্ভিদ গবেষক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ``দেশের মোট ভেষজ উদ্ভিদের ৬২ ভাগই রয়েছে চবিতে। অল্প জায়গায় একসঙ্গে এত অধিক প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ দেশের আর কোথাও পাওয়া যায়নি। এগুলো পরিচর্যায় বা সংরক্ষণে আলাদা কোনো আয়োজন নেই। বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যতটুকু পারেন করছেন। কিন্তু আমাদের একার পক্ষে এত সব প্রজাতির পরিচর্যা দেওয়া সম্ভব হয় না। ``
``এসব প্রজাতি রক্ষায় আলাদা প্রকল্প হওয়া উচিত`` মন্তব্য করে তরুণ এ গবেষক বলেন, ``এখনই যদি এসব প্রজাতি রক্ষায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে না আসে তবে এক সময় হারিয়ে যাবে জীবন রক্ষাকারী এসব উদ্ভিদ। ``
‘জাতিভিত্তিক উদ্ভিদবিজ্ঞান’ (এথনোবোটানি) গবেষণার জন্যও এসব প্রজাতি টিকিয়ে রাখা জরুরি বলেও জানান বখতিয়ার।
বিলুপ্ত প্রায় কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদের তালিকাও তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হলো-কুচিলা, উলটচণ্ডাল, বচ, ব্রাহ্মী, সাদা লজ্জাবতী, বজবরণ, ইন্দ্রজগ, অনন্তমূল, শ্যামলতা, কামিলা, খনা, গন্ধভাদুলী প্রভৃতি।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার উদ্দিন ছাড়াও অধ্যাপক ড. এএনএম আলমগীর, ড. আতিকুর রহমান ও ড. সত্যজিৎ ভদ্র ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করছেন। এসব গবেষকদের সঙ্গে কাজ করছেন বেশকিছু শিক্ষার্থী। এছাড়া আর কোনো জনবল নেই ভেষজ উদ্ভিদ প্রজাতি রক্ষণাবেক্ষণে।
বোটানিকাল গার্ডেনের কর্মীরা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে যতটুকু পরিচর্যা করেন তাও যথেষ্ট নয়। এছাড়া প্লটের পাশের আবাসিক কলোনির কারণেও ঠিকমতো সংরক্ষণ করা যাচ্ছেনা ভেষজ উদ্ভিদগুলো।
ভেষজ উদ্ভিদের প্লটের পাশে আবাসিক কলোনি গড়ে ওঠা প্রসঙ্গে চবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ``ছাত্রীদের জন্য খালেদা জিয়া হল নির্মাণের সময় এ কলোনি গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে সময় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এর বিরোধিতা করা হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ``
তিনি জানান, এ প্লটের পাশেই দুর্লল প্রজাতির ড্রসেরা (পতঙ্গভূক উদ্ভিদ) পাওয়া গেলেও তা সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১২
এসএইচ/
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।