ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

খরগোশের দেখা মিলছে না চা বাগানে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
খরগোশের দেখা মিলছে না চা বাগানে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে খরগোশ। ছবি: খোকন থৌনাউজাম

মৌলভীবাজার: একটা সময় ছিল, যখন নানান জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল আমাদের প্রকৃতি। ছোট ভূখণ্ডের কিছুমাত্র স্থান যেখানটাতে বনভূমি বা পাহাড়ি এলাকা বিস্তৃত যেখানে গিয়ে পড়েছে মানুষের লোলুপ দৃষ্টি! অপ্রয়োজনে মানুষ সেই প্রাকৃতিক বন বা পাহাড়ি এলাকাকে তারা ব্যবহার করছে নিজেদের চাহিদা মতো।

 

প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্বের দিকটি কথা মাথায় না রেখে মানুষ বেপরোয়াভাবে প্রাকৃতিক নানান সম্পদ আহরণ এবং ধ্বংস করে। এর ফলে চিরসবুজ বনভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানান প্রজাতির মূল্যবান জীববৈচিত্র্য। এসব কিছু মধ্যে বৃহত্তর সিলেটের চা বাগান অধ্যুষিত পাহাড়ি জনপদের মধ্যে অন্যতম স্তন্যপায়ী প্রাণী হলো ‘খরগোশ’।

এর লম্ফঝম্প অর্থাৎ লাফঝাপ বা দৌড়ঝাঁপ প্রকৃতির মাঝে দারুণ সৌন্দর্যের জন্ম দেয়। চা বাগানের জনপদে পাখি ডাকা সকাল অথবা ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যার মৃদু আলোর পরিত্যক্ত জনহীন তৃণভূমির আশপাশে একটা খরগোশকে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করা দৃশ্যটি আজ অতীত। অথচ প্রায় এক দশক আগেও এদের মাঝেমধ্যে দেখা যেতো, চা বাগানের নির্জন পথে বা ঝোপঝাড়ের ধারে কাছে।

‘কয়েক বছর আগে আমাদের এলাকার চা বাগানের নীরব এলাকায় খরগোশ ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম। দুই/তিনটা ছিল। এখন তো একটাও চোখেই পড়ে না বাবু’ বলে কথা প্রসঙ্গে জানান ফুলছড়া চা বাগানের প্রবীণ ব্যক্তি জগবন্ধু বুনার্জি।  

বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী খোকন থৌনাউজাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন তো খরগোশ দেখাই যায় না। আমি ভাগ্যক্রমে প্রায় দুই বছর আগে এ ছবিটি কুরমা বিট থেকে এই একটি মাত্র ছবি তুলেছিলাম। মানুষকে দেখা মাত্রই ওরা মুহূর্তে লুকিয়ে যায়।    

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এবং বন্যপ্রাণী বিষয়ক গবেষক ড. কামরুল হাসান এর বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, খরগোশ এখন প্রকৃতিতে খুবই কম দেখা যায়। এর প্রথম কারণ হলো, তাদের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে এবং এরা কমে যাচ্ছে। খরগোশ লুকিয়ে থাকার এলাকাগুলোতে মানুষের ডিসার্বেন্স (অসুবিধা তৈরি করা) বেড়ে গেছে। ঘন ঘন মানুষের বিচরণের ফলে তাদের বসবাস করার জায়গাগুলো ধ্বংস হয়ে পড়ছে।  

আর দ্বিতীয় কারণ, এটি প্রচুর হান্টিং (শিকার) হয়। এটা চা বাগানের অধিবাসীসহ নৃ-জনগোষ্ঠীরা করেন থাকেন। খরগোশ মাটির ভেতর গর্ত করে লুকিয়ে থাকে। কোনো কারণে কোনো শিকারি মানুষরা কেউ যদি সে গর্ত দেখে ফেলে তাহলে সেই গর্ত খুঁড়ে সেই খরগোশটিকে ধরে ফেলেন। অথবা যে এলাকায় খরগোশ বসবাস করে সেখানে শিকারিরা ফাঁদ পাতে। ফাঁদেও আটকা পড়ে। মোট কথা, খরগোশ বিলুপ্তির জন্য হান্টিং অবশ্যই একটি বড় প্রেসার (চাপ)।

খরগোশের বড় কান প্রসঙ্গে এ গবেষক বলেন, ‘মেইনলি (প্রধানত) সব এনিমেলের (প্রাণীর) কারণ একটু বড় এবং কারো কারো খাড়া কান থাকে। এর কারণ হলো, ওদের কানটা ওরা সুবিধা মতো এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দূরের সাউন্ড (শব্দ) ডিটেক্ট (চিহ্নিত) করতে পারে। যেকোনো ধরনের অল্প সাউন্ড হলেই ওরা সহজে বুঝতে পারে কোন দিক দিয়ে কোন সাউন্ড আসছে। সব সময় সতর্ক থাকার জন্য নিজেদের বিশাল কান ঘুরিয়ে তারা শব্দ এবং শত্রুর গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। এটি তাদের আত্মরক্ষার বায়োলজিক্যাল প্রসেস। ’   

তিনি আরও বলেন, খরগোশের ইংরেজি নাম Indian Hare এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lipus nigricollis. এরা তৃণভোজী প্রাণী। তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে দূর্বাঘাস, কলমি শাকসহ বিভিন্ন জাতের ঘাস এবং লতাগুল্ম। খরগোশ খুবই ভীতু প্রকৃতির প্রাণী, তাই মানুষকে দেখা মাত্রই পালিয়ে যায়। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক খরগোশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার। অল্প শব্দে অল্প সমস্যায় তারা দ্রুত নিরাপদস্থানে লুকিয়ে যেতে সক্ষম।

খরগোশ আমাদের দেশের ‘বিপদাপন্ন’ প্রজাতির প্রাণী। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা ২০১২ আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রাণীকে ধরা, হত্যা করা এবং খাওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানান অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান।   

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।