ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বগুড়ায় নেওয়ার পথে মারা গেল ৪ হরিণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
বগুড়ায় নেওয়ার পথে মারা গেল ৪ হরিণ

বগুড়া: জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে কিনে নিয়ে আসার পথে বগুড়ার বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) পাঁচটির মধ্যে চারটি হরিণই মারা গেছে।  এই মৃত্যুর জন্য অ্যানেস্থেসিয়ার (অবেদন) প্রভাবকে দায়ী করছে টিএমএসএসের পশু অভয়ারন্যের কর্তৃপক্ষ।

 

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হরিণগুলোর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম আহম্মেদ শাহী।

জানা যায়, রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে চিত্রা প্রজাতির হরিণগুলো ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসে পৌঁছায়। তখন খাঁচার মধ্যে চারটি হরিণকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর আগে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ট্রাকে করে হরিণগুলো পাঠানো হয়। একইভাবে চলতি বছরের মে মাসেও একই সংস্থার ক্রয় করা তিনটি হরিণ পরিবহনের সময় মারা গিয়েছিল।

টিএমএসএসের পশু অভয়ারণ্য সূত্র জানায়, বগুড়ার নওদাপাড়ায় টিএমএসএস তাদের বিনোদনপার্কে একটি বেসরকারি পশু অভয়ারণ্য বা চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছে। সেখানে ৯০ শতক জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে হরিণ প্রতিপালন বিভাগ। চলতি বছরে হরিণ প্রতিপালনের জন্য লাইসেন্স পায় সংস্থাটি। লাইসেন্স পাওয়ার পর তারা এখন পর্যন্ত জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে দুই চালানে ১১টি হরিণ কিনেন। প্রতিটি হরিণের মূল্য ধরা হয় ৫০ হাজার টাকা।

টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম আহম্মেদ শাহী জানান, রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ৫টি হরিণকে অ্যানেস্থেসিয়া করে খাঁচায় তোলা হয়। পরে খাঁচাসহ ট্রাকটি বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে সাভারে থাকতেই একটি হরিণ মারা যায়। আর রাত আড়াইটার দিকে আমরা যখন খাঁচা নামাই, তখন মোট চারটি হরিণকে মৃত পাই। একটি সুস্থ আছে।

তিনি জানান, এর মধ্যে ২৮ মে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ছয়টি হরিণ ক্রয় করা হয়। কিন্তু হরিণ হস্তান্তরের সময় অ্যানেস্থেসিয়া করার সময় তাদের হাতেই দুটি হরিণ মারা যায়। পরিবহনের সময় আরও একটি। ওই দুইটার পরিবর্তে ২৬ জুন আমাদের আরও দুটি হরিণ দিয়ে পাঠায় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আমাদের কাছে আনার পর একটি হরিণ বাচ্চা প্রসব করেছে। এ নিয়ে এখন মোট সাতটি হরিণ রয়েছে টিএমএসএস চিড়িয়াখানায়।

এভাবে দুই দফায় হরিণ মৃত্যুর কারণে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দুষছে টিএমএসএস।

এ বিষয়ে মোস্তাকিম শাহী জানান, তাদের কাছে থেকে হরিণ নেওয়া হচ্ছে, অথচ তারা কোনো গাইড লাইন বা পরামর্শ কিছুই দেয়নি। হরিণ অত্যন্ত সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) প্রাণী। কিন্তু তাকে অ্যানেস্থেসিয়া করছেন তারা, সেটার প্রয়োগমাত্রা ঠিক আছে কি না কিছুই আমরা জানি না। কিন্তু আমরা দেখেছি নিয়ে আসার পর হরিণগুলো খুবই দুর্বল থাকে। এজন্য মনে হয় অ্যানেস্থেসিয়ার মাত্রা বা এই কাজের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে ৷

এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেনারি সার্জন ডা. নাজমুল হুদা জানান, গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই হরিণ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। চিত্রা হরিণ অনেক সেনসেটিভ (সংবেদনশীল)। এদেরকে অতিরিক্ত কোনো অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয় না। দেখা যায়, ১০টি পাঠালে তিনটিই মারা যায়।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন জানান, খবর পেয়ে সদর উপজেলার একটি টিম গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। হরিণ ভয় পেলে, তাকে ধরতে গেলে হার্টঅ্যাটাক করে। এই প্রাণীটি খুবই নাজুক। আর পরিবহনের সময় তো ঝাঁকুনি লাগেই, লাফালাফি করেছে। এসব থেকে মারা গিয়ে থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।