বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশবিদ সোসাইটি।
গত বুধবার (৫ জুন) রাতে অনলাইনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় অংশ নেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ পরিবেশবিদ সোসাইটির উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মুজিবর রহমান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোাহিনুজ্জামান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির হেড অব সাস্টেইন্যাবিলিটি তাহমিনা জামান খান, অনুসন্ধানী ক্রিডস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাত হোসাইন এবং কেয়ার ইউএসএর নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার তাহমিনা হক।
আলোচকরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে সঠিক নগরায়ন ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা, উন্নয়ন প্রকল্প ও শিল্প কারখানায় সঠিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবহার, বৃষ্টির পানির পুনঃব্যবহার, ব্যাংকের গ্রিন ফাইন্যান্স, কৃষি গবেষণার মাধ্যমে খরা সহনশীল জাত উদ্ভাবন, বনায়ন, মরুময়তা রোধ ইত্যাদি নানামুখী পদক্ষেপ একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারে।
ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে পরিবেশবিদদের বড় প্রয়োজন, এক্ষেত্রে সরকার পরিবেশ ক্যাডার নিয়োগ দিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে আরও বেগবান করতে পারে।
পাশাপাশি তিনি ‘বাংলাদেশ পরিবেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ খোলার দাবি জানান, যা পরিবেশ সুরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সাহায্য করবে।
ড. মো. মুজিবর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবেশ সুরক্ষার কথা মনোনিবেশ না করে দিন দিন অপরিকল্পিত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে সরকারি সংগঠনগুলো অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের প্যাটার্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, এসব অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে পরিবেশবিদ সোসাইটির সদস্যদের জোর আওয়াজ ওঠাতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের তাগিদে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ড. মোহাম্মদ মোাহিনুজ্জামান মাটির গঠন ও মাটিতে থাকা পুষ্টি উপাদান কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূমি ব্যবহারের সঙ্গে ক্ষয় হচ্ছে, সেগুলো তুলে ধরেন। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ভূমি পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে জানান দেন।
তাহমিনা জামান খান ক্লাইমেট ফিন্যান্স, বাংলাদেশে ক্লাইমেট ফিন্যান্সিংয়ের সুযোগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমন এবং পরিবেশ রক্ষায় ক্লাইমেট ফিন্যান্সিংয়ের ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেন।
মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, আমরা মডার্ন টেকনোলজি, সিম্যুলেশন মডেল ব্যাবহার করে কৃষকদের খরা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে পারি। পাশাপাশি কৃষকদের নিকট স্মার্টফোন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খরার প্রাক-সতর্কবার্তা জানান দিতে পারি।
তিনি উত্তরাঞ্চলে খরার প্রভাব ও খরা মোকাবিলায় আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তাহমিনা হক বলেন, আবাসযোগ্য ও আবাদী স্থানগুলোর পরিবেশ দিন দিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের সবাইকে, বিশেষ করে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসতে হবে।
সংগঠনের পরিচালক (শিক্ষা ও পেশাগত উন্নয়ন) পরিবেশবিদ এফ এম আশরাফুল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) পরিবেশবিদ শেখ আবু জাহিদ। সমাপনী বক্তব্য দেন সমিতির নির্বাহী পরিচালক পরিবেশবিদ আবু জুবায়ের।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশবিদ সোসাইটি থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (প্রচার ও যোগাযোগ) পরিবেশবিদ মো. আব্দুল কাদের তালুকদার; পরিচালক, পরিবেশ আইন ও নীতি পরিবেশবিদ মো. তোফায়েল হোসেন; পরিচালক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিবেশবিদ রাশেদুল আলম সরকার; পরিচালক ও পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক পরিবেশবিদ মো. রায়হান পলাশ; কার্যনির্বাহী সদস্য পরিবেশবিদ সুজিত কুমার রায়; পরিবেশবিদ মো. মুস্তাফিজুর রহমান রাব্বি; পরিবেশবিদ মো. আতিকুর রহমান মল্লিক ও পরিবেশবিদ তানজিমা হক তৃষা ।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারাবিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির তাৎপর্য বিবেচনা করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৪
এইচএ/