মৌলভীবাজার: দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক। অনেকে জেনে বা অনেক না জেনে এই সাপটি নিয়ে আলোচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লেখনিতে মন্তব্য জুড়ে দিচ্ছেন।
সাপ প্রকৃতির এক প্রকারের সরীসৃপ বন্যপ্রাণী। বুকের ওপর ভর করে চলাচল করে তাদের সরীসৃপ প্রাণী বলে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাপ নিজে অন্য প্রাণীর খাবার হয়ে সে প্রাণীজগতের বাস্তুসংস্থান রক্ষণাবেক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সাপ মানেই জনআতঙ্ক! সাপ মানেই ‘রাসেলস ভাইপার’! এই সাপটির দোহাই দিয়ে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সাপ মারা অভিযান শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে বিপন্ন হয়ে পড়বে প্রকৃতির ভারসাম্য।
সম্প্রতি ‘রাসেলস ভাইপার’ প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে গণমানুষের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসানের সঙ্গে ।
তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপারের বাংলা নাম ‘চন্দ্রবোড়া’, ‘বোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’। এই সাপ সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত তথ্যগুলো সাধারণ মানুষদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আসলে সচেতনতাই পারে আমাদের এই সাপের হাত থেকে রক্ষা করতে। সম্প্রতি বনবিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত রাসেলস ভাইপার বিষয়ে নির্দেশনায় আমার দেওয়া তথ্যগুলোই প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সবারই জানা উচিত, এমন কিছু তথ্যের চুম্বক অংশ বলছি:
‘এ সাপটির দেহ মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে থাকে। মানুষ তার চলার পথটি ভালোভাবে খেয়াল না করে এগিয়ে যাওয়া কখনোই উচিত নয়। লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, ঘাসপূর্ণ কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে। বসতবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। ’
তিনি বলেন, অসাবধানতাবশত কাউকে যদি কখনো বা রাসেলস ভাইপার দংশন করে তবে দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশন করলে বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশন করলে হাত নড়াচড়া করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় উপজেলা/জেলার সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে। রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা ‘অ্যান্টিভেনম’ নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। ভুলেও ওঝার কাছে গিয়ে জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।
আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশে ‘সাপখেকো প্রাণীদের’ প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ড. কামরুল হাসান বলেন, বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা-নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক, শঙ্খিনীসহ কিছু প্রজাতির সাপ রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে।
ফলস রক্ষায় এই সাপটি গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই সাপের বিষ দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বানানো হয়।
রাসেলস ভাইপার দেখলে তাকে ধরা বা মারার চেষ্টা করা উচিত নয়। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করা বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করা যেতে পারে বলে জানান এই বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
বিবিবি/এএটি