আয় রে আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে
না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তা দেখে দেখে ভোঁদড় নাচে
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা
ওপরের লোকপ্রিয় শিশুতোষ ছড়ার ‘নাও’ বা নৌকা আর বোয়াল মাছ দুটোই নদী কিংবা বৃহৎ প্রাকৃতিক জলাশয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এছাড়া ছড়ার নৃত্যরত প্রাণী ভোঁদরটিও নদী বা খাল-বিল এলাকার প্রাণী হিসেবেই পরিচিত।
ভোলার চরফ্যাশনে আটক প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। মাছ শিকারে পটু এবং স্তন্যপায়ী আধা জলচর প্রাণী ভোঁদড় সাধারণত নদী বা বিলের আশপাশে আবাস গাড়ে।
তবে আটক ভোঁদড়টিকে চরাঞ্চলের সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে চরফ্যাশনের রসুলপুর গ্রামের ছাবেদ আলীর পুকুর থেকে আটক করা হয় ভোঁদড়টিকে। প্রাণীটিকে আটক করতে গিয়ে ৮ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
অপরদিকে ভোঁদড় আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রাণীটিকে দেখতে শত শত মানুষ ভীড় জমায়।
রসুলপুর গ্রামের ছাবেদ আলী জানান, শনিবার রাতে তারা পুকুরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সেচ দেন। এসময় রাতেই ভোঁদড়টি দেখতে পান।
দুপুরে গ্রামবাসী চেষ্টা চালিয়ে ভোঁদড়টিকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ভোঁদড়টিকে উদ্ধার করেন।
ছাবেদ আলী আরো জানান, আটক করতে গিয়ে ভোঁদড়ের কামড়ে হারুন মাঝি, ইউনুছ মাঝি, মিজান দালাল, জাহাঙ্গীর, আব্দুর রহমান, মাসুম, ফিরোজ দালাল, কামাল এবং মান্নান হাওলাদার আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে কোথা থেকে ভোঁদড়টি এসেছে তা বিস্তারিত জানাতে পারেনি কেউ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিরল প্রজাতির ভোঁদড়টি কোথা থেকে এসেছে তা জানা যায়নি। এটি আকারে বেশ বড়। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় এ ধরনের ভোঁদর দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, ভোঁদড়টিকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার দুর্গম চর কুকরী-মুকরীর সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাছ ধরতে পটু বেজি (মাস্টেলিডা) গোত্রের শ্বাপদ জাতীয় এই প্রাণীটিকে পোষ মানানো যায়। পোষা ভোঁদড় দিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের এক শ্রেণির গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করে থাকে। তবে ভোঁদড়ও যেমন দুর্লভ হয়ে এসেছে তেমনি ভোঁদর পোষা জেলেদের সংখ্যাও এখন আর আগের মত নেই।
ভোঁদড় বিষয়ে কিছু তথ্য
ভোঁদড় সাধারণত লিপ্তপদী (হাঁসের পায়ের মতো আঙ্গুলগুলো পাতলা পর্দা দিয়ে জোড়া লাগানো) প্রাণী। এদের লেজ মোটা আকারের এবং বেশিরভাগেরই পায়ে ধারালো নখযুক্ত থাবা আছে। সাঁতার কাটার সময়ে নাক ও কানের ফুটো বন্ধ থাকে। নাকের ডগায় লম্বা গোঁফের মতো খাড়া লোমগুলো বেশ সংবেদনশীল। এদের গোঁফ বা নাগের ডগার লোম যেহেতু খাড়া, তাই জলে ভিজে লেপ্টে যায় না। ফলে ঘোলা জলেও এই স্পর্শকাতর গোঁফ শিকারের উপস্থিতি জানান দেয়। নখহীন ভোঁদড়ের হাত-পায়ের পাতাও খুব স্পর্শকাতর। ফলে কাদায় লুকানো ঝিনুক, শামুক, চিংড়ি, কাঁকড়া এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না।
এদের শক্তিশালী ছুঁচালো দাঁত আর মাড়ি পিচ্ছিল শিকার ধরতে বা মাছের মুড়ো চিবোতে বিশেষ সহায়ক। ভোঁদড়ের দেহে দুই স্তর লোম রয়েছে। প্রথম স্তর আকারে ছোট, কোমল এবং তাপরোধী। এই অন্তঃলোম বাতাস ধরে রেখে পানির নীচে এদের দেহ উষ্ণ ও শুকনো রাখে। দ্বিতীয় স্তরের লোম লম্বা। এই লোমই আমাদের চোখে পড়ে, এগুলো জলে ভিজে ওঠে। এদের লেজ চ্যাপ্টা, ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি (নাকের ডগা থেকে থেকে লেজ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চি হয়ে থাকে) লম্বা। নৌকার দাঁড়ের মতো হাত-পা (পা হাতের চেয়ে বড়), শক্ত খাড়া
গোঁফ পানিতে শিকার ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। ভোঁদড় লিপ্তপদী বলে পানির নিচে খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং পানির উপরে মাথা না তুলে একবারে প্রায় আধা কিলোমিটার যেতে পারে। অধিকাংশ সময় এরা বাচ্চা সাথে নিয়ে শিকার খোঁজে। ভোঁদড়-গোত্রের অন্যান্য প্রাণীরা নিশাচর হলেও ভোঁদড় সব সময়ই কর্মতৎপর। তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর