ঢাকা: সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি যার আয়তন দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
অববাহিকার সমুদ্রমুখি সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত।
সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ।
মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলের এলাকা।
এখানে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর বাস করে।
সম্প্রতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে এ বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি আর এরই সাথে এখানে বাস করা অনেক প্রাণীর জীবন হয়ে ওঠেছে বিপন্ন। বিপন্ন প্রাণীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
মানুষের আগ্রাসনে গোলপাতার ঝোঁপ আর গাছ যেভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে বাঘের বিচরণ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। খাদ্যঘাটতি দেখা দিচ্ছে জঙ্গলের ভিতরে। আর তাই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্তির হুমকিতে অবস্থান করছে।
সরকারি এক জরিপে জানা গেছে, সুন্দরবন প্রায় ৪৪০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১, বাঘিনী ২৯৮ এবং বাঘের বাচ্চা ২১টি।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা, বন উজাড়, বাঘ হত্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ আরো নানা প্রতিকূলতার কারণে আশংকাজনকহারে কমে যাচ্ছে বাঘের সংখ্যা।
বাঘের আক্রমণে মানুষ, আবার মানুষের হাতে বাঘের প্রাণহানি প্রায়ই ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে মানুষ-বাঘ সংঘর্ষে ২৪০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন অপরদিকে বাঘ মারা পড়েছে মোট ৩৩টি।
পঞ্চাশের দশকেও বর্তমান মধুপুর এবং ঢাকার গাজীপুর এলাকায় এই বাঘ দেখা যেতো; মধুপুরে সর্বশেষ দেখা গেছে ১৯৬২ এবং গাজীপুরে ১৯৬৬ সালে।
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৩০০০-এর মতো আছে, তন্মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় উপমহাদেশে। এই সংখ্যা হিসাব করা হয় বাঘের জীবিত দুটি উপপ্রজাতি বা সাবস্পিসিজের সংখ্যাসহ।
বাঘ শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৪৫০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর সংখ্যা ২০০-২৫০টির মতো।
উল্লেখ্য, বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন বনবিভাগে “স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রজেক্ট” (এসআরসিডব্লিউপি) নামে একটি প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ২০১১ সালের জুন মাসে যেটা শেষ হবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৩
সম্পাদনায়: আবুল কালাম আজাদ, নিউজরুম এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর