ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অন্যান্য খাতের তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে দশমিক ৩৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয়ক বেইজলাইন গবেষণা ফলাফল প্রকাশের এক সভায় তিনি এ দাবি করেন।
ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এই খাতে ক্ষতিগ্রস্ত তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাই, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ” জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় সবাইকে একই স্বরে কথা বলতে হবে। ”
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিট (সিসিএইচপিইউ) এই সভার আয়োজন করে।
অষ্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ও স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিট এই গবেষণা পরিচালনা করে।
সভা থেকে দেশের উপকূলবর্তী ৮টি জেলায় ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলার ১১২টি ইউনিয়নের ২২৪টি গ্রামের ৬,৭২০টি বাড়িতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব সংক্রান্ত এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোদাচ্ছের আলী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এখন থেকেই কাজ করতে হবে। ”
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় পরিচালিত জনগোষ্ঠীর ৪৬ ভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের কথাটি শোনেননি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে।
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ডা. ইকবাল কবীর জানান, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভুত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবলোয় এখনও পুরোপুরি তৈরি নয়। এ গবেষণার ফলাফলে তা প্রতীয়মান হয়েছে।
তিনি জানান, কার্যকর উদ্ভাবনী অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়োজন রয়েছে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমানো।
এছাড়া শিশুদের অপুষ্টি কমানোর ক্ষেত্রে স্কুলস্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
নিউক্যাসল গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক অষ্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মিল্টন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গবেষণায় বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। এই বেজলাইন সার্ভেটি ভবিষ্যত গবেষণায় একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। ”
এ বিষয়ে বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে কোনোভাবেই দায়ী না হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে, তা আমরা অনেকেই জানি না। আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, আমরা ভুক্তভোগী। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ”
অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ড. বায়েজিদুর রহমান।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম বদরুদ্দোজার সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণায়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. ইকবার কবীর ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডা. বায়েজিদুর রহমান।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৩
এসএমএ/এমএন/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর