ভোলা: খাদ্য ও মিঠা পানির সঙ্কট, নির্বিচারে আবাসস্থলের গাছ কাটা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের ফলে ক্রমেই স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হওয়ায় লোকালয়ে চলে আসছে ভোলার বনাঞ্চলের হরিণ।
চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়ে মাঝে-মধ্যেই পাশ্ববর্তী এমনকি দুরবর্তী লোকালয়েও ছুটে আসছে ক্ষুধার্ত হরিণের দল।
এতে করে হরিণ শিকারীদের হাতে নির্বিচারে আটক ও মারা পড়ছে লোকালয়ে আসা হরিণ।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার বনাঞ্চল এলাকায় বসতবাড়ি ও চাষাবাদের ফলে বনাঞ্চলের পরিধি কমে যাচ্ছে।
এর ফলে হরিণের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসার পাশাপাশি তাদের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এরসঙ্গে আবহাওয়া ও জলাবায়ুর পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে হরিণের আবাসস্থলের স্বাভাবিকতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যশৃঙ্খলেও দেখা দিয়েছে সমস্যা।
এর ফলে বাধ্য হয়ে লোকালয়ে এসে পড়ছে হরিণের দল। এই সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছে চোরা শিকারীরা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ভোলার কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর উড়িল, বদনার চর, সাকুচিয়া, হাজিরহাট ও চর পাতিলায় রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার চিত্রা প্রজাতির হরিণ রয়েছে।
নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ থেকে দল বেঁধে হরিণ মনুপরা ও তজুমদ্দিনসহ বিভিন্ন স্থানে ভাসতে ভাসতে লোকালয়ে চলে আসছে। এরমধ্যে কিছু আসছে খাদ্যের সন্ধানে এবং কিছু মিঠা পানির সন্ধানে।
মনপুরা মহিলা কলেজের প্রভাষক মাহাবুবুল আলম শাহিন জানান, হঠাৎ করেই লোকালয়ে আসছে শুরু করেছে হরিণ। গভীর বনে গিয়েও যে হরিণের দেখা পাওয়া দুস্কর ছিল সে হরিণই আসছে মানুষের কাছে।
তবে এদের দেখতে পেয়েই ধরার জন্য তাড়া করছে মানুষ। কিছু চোরাশিকারীও তৎপর হয়ে ওঠেছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল ও বন্দুক দিয়ে দিয়ে এক শ্রেণীর শিকারী হরিণ শিকারে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তারা পুলিশ ও বন বিভাগের চোখের আড়ালে জঙ্গল থেকে হরিণ ধরে এর মাংস ও চামড়া বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এদের সঙ্গে কিছু অসাধু জেলে চক্রও রয়েছে।
সর্বশেষ রোববার মনপুরা থেকে একটি হরিণ খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসলে চরফ্যাশন থেকে হরিণটি উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করে দেয় বন বিভাগ।
এ ব্যাপারে তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, চোরা শিকারীরা যাতে হরিণ শিকার করতে না পারে সেদিকে পুলিশের কঠোর নজরদারী রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রোদের তাপ, মিঠা পানি ও খাদ্যের সন্ধানে মাঝে মধ্যে হরিণ লোকালয়ে আসে। ’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘নিঝুম দ্বীপ থেকেও কিছু হরিণ লোকালয়ে আসে। ভোলায় হরিণের অবাস্থল অন্য এলাকার তুলনায় অনেক ভালো। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর