সিলেট: প্রতি মাসে ১২০ থেকে ১৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের অকাল মৃত্যু ঘটে দেশের বন্যপ্রাণীর অন্যতম অভয়ারণ্য বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায়। আর বছরে দুর্ঘটনায় মৃত সাপের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০০টির কাছাকাছি।
দেশে এই প্রথমবারের মত সাপ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই চিত্র। একই সঙ্গে সাপের তিনটি নতুন প্রজাতিরও সন্ধান পাওয়া গেছে লাউয়াছড়ায়। বেন্ডেড টিংকেট, ইরিডিসেন্ট ও রঙিলা কেঁচো নামের এই নতুন প্রজাতির সাপগুলোও গাড়ি চাপায় মারা পড়ছে মাঝে মধ্যেই।
সাপের এই বিলুপ্তি অব্যাহত থাকলে তার প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও প্রকৃতিতে। তাই বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য লাউয়াছড়া উদ্যানের রাস্তাটি পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছেন পরিববেশবাদীরা।
বিষয়টির ভয়াবহতা লক্ষ করে সাপ গবেষকরা এর আপাত সমাধান হিসেবে বলছেন, লাউয়াছড়ার পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী প্রত্যেকটি যানবাহনকে সর্তকতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে। কোনো অবস্থায় লাউয়াছড়ার ভেতরে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি বেগে গাড়ি চালাতে না দেওয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া উচিত। সাপ কিংবা বন্যপ্রাণী দেখলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে আগে তাকে যেতে দিতে হবে, এরপর যানবাহন যাবে।
২০১১ সালের ১২ মে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সাপ নিয়ে এইদীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা শুরু করেন ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার সিজার রহমান।
ড. এস এম এ রশিদের সার্বিক সহায়তায় এবং আমেরিকার বন্যপ্রাণী বিষয়ক এনজিও ওরিয়েন সোসাইটি’র পৃষ্ঠপোষকতায় দেড় বছরের গবেষণায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩৭ প্রজাতির সাপের বিচরণ লক্ষ করেছেন গবেষক দল। এরমধ্যে ৩২ প্রজাতির সাপের বংশ হারিয়ে যাবে বলে জরিপে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের লাউয়াছড়া অংশে ৪/৫টি মৃত সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এ হিসেবে মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের অকাল মৃত্যু ঘটে। আর বছর শেষে দুর্ঘটনায় মৃত সাপের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০০টির কাছাকাছি।
দেশে এই প্রথম সাপ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ক্যারিনাম’র সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে সাপ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। দেশের কোথায় কোন প্রজাতির সাপ আছে তার ওপর জরিপ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এপর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিষধর ও বিষহীন প্রায় শতাধিক প্রজাতির সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটির সভাপতি অনিমেষ ঘোষ বলেন, ‘সাপ নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। বাস্তবে সাপ পরিবেশের জন্যেই দরকারি এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। সাপের খামার থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করা যেত- কিন্তু এ ব্যবস্থা এখনো আমাদের এখানে গড়ে ওঠে নি।
সাপের বিষ নিয়ে ভয় সম্পর্কে অনিমেষ জানান, পৃথিবীর শতকরা মাত্র ৪ ভাগ সাপ বিষযুক্ত। আর প্রত্যেক সাপই মানুষ দেখলে ভয় পায়। তারা মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই লুকাতে চায়। কিন্তু মানুষ যদি তাদের আঘাত করে, তখন তারা কামড় দেয়। তবে বাংলাদেশের অনেক মানুষ সাপের কামড়ে বিষে নয়, ভয়েই মারা যায়।
তিনি আরও জানান, শ্রীমঙ্গলের ফুল্বাড়ি বাগানের মানুষ আগে সাপ দেখলেই মেরে ফেলত। কিন্তু তারা এখন সচেতন হওয়ায় সাপ দেখলে সাপ গবেষক সিজার ভাই অথবা তার টিমকে জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৩
এসএ/সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর