লামা(বান্দরবান): বন মোরগ, বনে থাকে। বন মোরগ দেখতে দেশীয় মোরগের মতো হলেও আকারে ছোট ও ওজনে অনেক কম।
বন মোরগের মাংস খুবই সু-স্বাদু। বন মোরগের রঙ লাল আর বন মুরগীর রঙ হালকা লাল। বন মুরগী ১০-১২টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে দেশীয় মুরগীর ডিমের চেয়ে একটু ছোট। বন মোরগ-মুরগী গহীন অরণ্যে থাকতে পছন্দ করে। এক সময় পাহাড়ে গেলেই দেখা যেতো বন মোরগের ছুটাছুটি। কিন্তু এখন তা একেবারেই দুর্লভ।
তবে, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার লামা পৌর শহরের মাছ বাজার সংলগ্ন পুকুর পাড়ে ১০ থেকে ২০ জন শিকারী বন মোরগ ও পোষা বন মোরগের প্রায়ই বিকিকিনি হয়। প্রকাশ্যে বন মোরগ বিক্রি করলেও এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অকার্যকর।
ফলে, পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ মোরগ। আগের মতো এখন আর দেখা যায় না বন মোরগ-মুরগী। তবে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়ী প্রবাসের ডুরি ও জাহাঙ্গীরের ডুরিসহ গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে কিছু কিছু সময় বন মোরগ-মুরগী দেখা যায়।
বন মোরগ শিকারী পালিত বড়ুয়ার বাংলানিউজকে জানান, শিকারীরা পোষা মোরগকে নিয়ে বন মোরগের কাছাকাছি নিয়ে বেঁধে রাখেন। পোষা মোরগ ডাক দিলে বন মোরগ মারতে আসে। মারামারির এক পর্যায়ে শিকারী দৌঁড়ে গিয়ে বন মোরগটিকে ধরে ফেলে।
কোনো কোনো শিকারী চিকন সুতার কল, ফাঁদ ও জাল দিয়ে একসঙ্গে ৭ থেকে ৮টি মোরগ-মুরগী শিকার করেন। আবার কোনো কোনো শিকারী ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে আবাসস্থলে ছিটিয়ে দেয়। আর এ ধান খেয়ে ছোট-বড় অনেক মোরগ-মুরগী মারা যাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে জবাই দিতে হয়। অন্যথায় এরা নিজের পায়ের ধারালো নখ দিয়ে গলার রগ ছিড়ে আত্মহত্যা করে।
সূত্র জানায়, শিকারীরা ১টি বন মোরগ বিক্রি করেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর বন মুরগী বিক্রি করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অনেকে অতিথি আপ্যায়ন অথবা শখ করে খাওয়ার জন্য শিকারীদের আগাম টাকা দিয়ে থাকেন।
তবে, একটি পোষা বন মোরগের দাম ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। পরীক্ষা নিরিক্ষায় যে বন মোরগটি বেশি ভালো মনে হয় তার দাম আরও একটু বেশি। অন্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুম বন মোরগ শিকারের উপযুক্ত সময়।
এ সময় একটি পোষা বন মোরগ থেকে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক শিকারী বন মোরগ শিকার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আরেক শিকারী মৌলভী জাফর বাংলানিউজকে জানান, বন মোরগের পোষ মানাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। প্রথমত বন মোরগের আবাসস্থল থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। তারপর দেশি মুরগী দ্বারা তা দিলে ২১ দিন পর বাচ্চা ফুটে। বাচ্চা ফোটার দিন থেকে এই বাচ্চা বেঁধে রেখে লালনপালন করতে হয়। না হলে ৫ থেকে ৭দিন পর অথবা একটু একটু পাখা গজালে বাচ্চাগুলো উড়াল দিয়ে পাহাড়ের জঙ্গলে চলে যায়। এই মুরগি বড় হয়ে ডিম পাড়লে; বাচ্চা ফোটালে ওই বাচ্চা পোষা বা গৃহপালিত হয়। পোষা বন মোরগ শিয়াল বিড়ালে নষ্ট করতে পারে না। এদের রোগ বালাইও কম হয়।
অভিজ্ঞদের মতে, ১০টি দেশীয় মুরগি প্রজননের জন্য একটি মোরগ প্রয়োজন হয়। কিন্তু একটি বন মোরগ ২০টিরও বেশি মুরগিকে প্রজনন দিতে সক্ষম। এছাড়া এই বন মোরগ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে খুবই পটু। একটি বন মোরগের সঙ্গে বড় আকারের দুটি দেশীয় মোরগ লড়াই করে কুপোকাত হয়ে যায়।
বন মোরগের পায়ের নখ ও ঠোঁট খুবই ধারালো। লড়াইয়ের সময় বন মোরগ অন্য মোরগকে নখ দিয়ে আচড় দেয় এবং ডানা দিয়ে আঘাত করে দেশীয় মোরগকে ধরাশায়ী করে ফেলে।
স্থানীয়রা জানান, এভাবে বন মোরগ শিকার করা হলে অচিরেই পাহাড় থেকে বন মোরগ হারিয়ে যাবে।
পশ্চিম রাজবাড়ীর বন মোরগ শিকারী মো. শফি আলম বাংলানিউজকে বলেন, “দিনকাল এখন ভালো যাচ্ছে না। শীত মৌসুম আসলে পোষা বন মোরগটি দ্বারা ১০ থেকে ১২টি বন মোরগ-মুরগী শিকার করি। এক একটি বন মোরগের বাচ্চা ৪০০-৫০০ টাকা করে বিক্রি করে থাকি। ”
এ বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাঈদ আলী বাংলানিউজকে জানান, বন মোরগ শিকারের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে, কেউ বন্য প্রাণী শিকার করলে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: শফিকুল ইসলাম ও প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর