ঢাকা: আজকের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই আগামীতে পরিবেশ, ভূ-বিদ্যায় গবেষক হিসেবে অবদান রাখবে- এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাকে ঘিরেই একটি আয়োজন- ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াড, সংক্ষেপে ‘নিও’।
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো পরিবেশ বিষয়ক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই)।
এবছর বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শেষে সম্প্রতি চূড়ান্ত পর্যায়ের চারজনকে নির্বাচন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে পরিবেশ ও ভূতত্ত্ব বিষয়ক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী চারজনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য বাছাই করা হয়। ভারতে আগামী ১১ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত চারজন হলেন- রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র মো. মাহমুদুন্নবী, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের শেখ হাসিন ইনান, ঢাকার এস এফ এক্স গ্রিন হ্যারাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অভয় দত্ত এবং ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সোহায়মা জাবীন।
পরিবেশ ও পৃথিবী গঠন নিয়ে জানার পরিধি আরও বাড়িয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই বিওয়াইইআই ২০০৯ সালে কাজ শুরু করে। সংগঠনটির সভাপতি শিহাব সামীর বলেন, প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই কাজ করা শুরু করে। পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমেই এ বিষয়ে যারা ভাবতে চায়, কাজ করতে চায়, এমন তরুণদের একত্র করার কাজ করতে থাকে তারা।
২০১২ সাল থেকে সংগঠনটি উপলব্ধি করে, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হলে কাজ করতে হবে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আর সেই ভাবনা থেকে ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াডের আয়োজনের কথা মাথায় আসে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহায়তায় এ আয়োজন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা এ প্রতিযোগিতার সিলেবাস ও প্রশ্ন তৈরি করেছেন।
শিহাব সামীর জানান, গতবছর হাতে সময় কম থাকাতে আর্জেটিনায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশ নিতে নির্বাচিত প্রতিযোগিদের পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে এবছর তা ভারতে অনুষ্ঠিত হবে বলে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী করতে পারবে বলে আশাবাদী তিনি ও তার সংগঠন।
এক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা না পাওয়াটাই বড় বাধা বলে মনে করছেন তিনি। তবে, শিক্ষার্থীদের মাঝে এ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে পরিবেশ বা ভূ-বিদ্যা বিষয়ে আলাদা কোনো সিলেবাস না থাকলেও নিজ উদ্যোগে পড়াশুনা করে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা।
তবে ঢাকার বাইরের বিভাগীয় শহরগুলোতে ছেলেমেয়েদের আগ্রহের ব্যাপারটি লক্ষ্যণীয় ছিল বলে জানালেন উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও জানান, এ ধরনের প্রতিযোগিতা আমাদের দেশে পরিবেশ বিষয়টিকে আরও পরিচিতি দেবে। প্রতিযোগিতাটি ম্যাথ অলিম্পিয়াডের মতোই একটি বড় আয়োজনে পরিণত হবে একদিন।
আয়োজকদের এ উদ্যোগকে ভীষণ অভিনব ভেবেই কোনো কিছু চিন্তা না করেই অংশ নিয়ে ফেলেন সোহায়মা জাবীন। তিনি এখন এ-লেভেলে পড়ছেন। সিলেবাসের পড়াশুনার বাইরে এবিষয়ে পড়তে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে পরিবেশ ও পৃথিবীর গঠন বিষয়ক নানা অজানা তথ্য তাকে বেশ আগ্রহী করে তোলে। আর তাই পরবর্তীতে এ বিষয়ে নিজ উদ্যোগেই কিছু করার পরিকল্পনা আছে তার।
এ মুহূর্তে চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত তরুণ এ প্রতিযোগী। জীবনে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে গিয়ে এ ধরনের ভিন্নধর্মী একটি পরীক্ষায় বসতে হবে ভেবে দারুণ রোমাঞ্চিত তিনি। নিও’র পুরো পরিক্রমাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে পেরে, নিজেদের ভাবনা আদান প্রদান করতে পেরে দারুণ খুশি সোহায়মা।
দেশের প্রান্ত ছাড়িয়ে বর্হিবিশ্বের প্রায় ৫০-৫৫টি দেশের প্রতিযোগীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খুব একটা সহজ নয় বলে অভিমত মাহমুদুন্নবীর। আর তাই এর জন্য নিতে হচ্ছে অনেক ভালো প্রস্তুতি। মূলত ইন্টারনেট আর স্কুলের লাইব্রেরিকে থেকেই পরিবেশ বিষয়ক তথ্য অনুসন্ধান করছেন প্রতিযোগীরা।
তবে এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে চূড়ান্ত প্রতিযোগীরা পাচ্ছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। আয়োজকরা বলছেন, আগামীতে বাংলাদেশে পরিবেশ বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসবে এসব তরুণরা। এ ধরনের উদ্যোগ তাদের আরও সংগঠিত করেতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর