ঢাকা: শ্বাসমূলের কারণে সুন্দরবনের মাটিতে পা ফেলা দুষ্কর। কিন্তু শ্বাসমূলই ম্যানগ্রোভের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু কতদিন? সুন্দরবনের দিন ফুরিয়ে আসছে মনে হয়! সুন্দরবনের আশেপাশের গ্রামগুলোতে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য ইউক্যালিপ্টাস দেখে এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক।
ইউক্যালিপ্টাস আকাশমণি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Auri, Ear leaf, Acacia ও বৈজ্ঞানিক নাম Acacia auriculiformis.
খুব দ্রুত বাড়ে এটি। আর যেকোনো মাটিতে বেঁচে থাকতে পারে বলে এই অস্ট্রেলীয় জাতের গাছটি বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গাছটি যে পরিবেশের জন্য যে ক্ষতিকর, তা এরই মধ্যে পরিবেশ সচেতন মহলে বেশ আলোচিত হচ্ছে।
ইউক্যালিপ্টাস খুব বেশি মাত্রায় মাটির নিচের পানি শোষণ করে ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি তৈরি করে। একই সঙ্গে এ গাছের পাতা মাটির জন্য ক্ষতিকর। মাটিতে পড়ার পর পাতার পচনেও অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে, যা মাটি ভেদ করে পানি ভূগর্ভে যেতে বাধার সৃষ্টি করে।
কিন্তু সুন্দরবনের নিজস্ব প্রজাতির হাজার হাজার উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুন্দরবনে রয়েছে সহনশীল পরিবেশও। তবে সেগুলোকে উপেক্ষা করে কেন এই বিদেশি প্রজাতির গাছকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কে বা কারা ব্যাপারটির জন্য দায়ী?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেন ১১নম্বর পদ্মপকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের স্থানীয় এনজিও নোয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের শিমুল রহমান।
তিনি বলেন, আইলার পর থেকে বিভিন্ন এনজিও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে পুরো ইউনিয়নেই ইউক্যালিপ্টাস রোপণ করে। বন অধিদপ্তরের সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ থেকেই ইউক্যালিপ্টাস
রোপণের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানায় এলাকাবাসী। আর তার বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
তবে সুন্দরবনের আশেপাশে ওনজিও’র উন্নয়ন কাজ চলছে এমন গ্রামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইউক্যালিপ্টাসের পারিবেশ খেঁকো চরিত্র সম্পর্কে মানুষের বিশেষ ধারণা নেই। বিভিন্ন গ্রামে এই গাছ রোপণ করা হয় কৃষিজমির আল ধরে অথবা ঘেরের আশেপাশে, যার কারণে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য গবেষক ড. আনিসুজ্জামান খান বলেন, এ ধরনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য বহন করে যে বন, সেখানে ইউক্যালিপ্টাসের মতো বিদেশি প্রজাতির গাছ রোপণের ভাবনাটাই সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক। এটি ম্যানগ্রোভের পরিবেশের সঙ্গে বৈরী স্বভাব প্রদর্শন করে।
তিনি বলেন, আইলার মতো দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য আম, কাঁঠাল, করচ, জিকাগাছও রোপণ করা যেত। কারণ এগুলো ভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ হলেও দেশি প্রজাতি। সুন্দরবন এলাকায় কোন দরকারই নেই ইউক্যালিপ্টাস রোপণের।
তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি লাভজনক প্রকল্পের চিন্তা-ভাবনা থেকেই বন বিভাগ এ ধরনের একটি প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিচ্ছে। প্রথমে গাছ আমদানির অনুমোদন এবং পরবর্তীতে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও সার আমদানি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের মতো এমন একটি নিবিড় বনভূমিতে বিভিন্ন বিদেশি কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশবান্ধব অনেক পোকামাকড়ের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। জীববৈচিত্র্যের ওপর এমন ধীর ও প্রচ্ছন্ন হামলা প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন কাজ করছে।
অবিলম্বে এটি বন্ধ করতে হলে পরিবেশবাদীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান এই গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৩
এনকে/এমআইপি/এএ/আরকে