ঢাকা: আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। সবার জানা সেটা।
কিন্তু বর্তমানে সে রূপ কি দেখা যাচ্ছে? বোধহয় না-ই বলা হবে। যেটা আছে সেটা সামান্যই। মাঝে মাঝে মনে হয়, বর্ষা যেন আসছে ক্ষণিকের অতিথি হয়ে। বর্ষার ঝর ঝর মিষ্টি সে রূপ আর নেই। আষাঢ়-শ্রাবণে আর অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয় না। বদলে গেছে চিরায়ত রূপ। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অনাবৃষ্টি।
আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসকেই বর্ষাকাল গণনা করা হয়। নিয়ম ভেঙে অনিয়মিত বৃষ্টি ছাড়াও এবছর বর্ষার প্রথম তিন মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় নেমে এসেছে অর্ধেকে। এবছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি কম হয়েছে ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ।
অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় জলবায়ুর পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার জুন মাসে দেশে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫২৬ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের থেকে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম।
জুলাইয়ে বৃষ্টি হয়েছে ১২ হাজার ৪৯৮ মিমি, যা ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ কম। আগস্টে হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮১ মিমি। যা স্বাভাবিকের থেকে কম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ।
আগস্টে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮১ মিমি, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ কম। আগস্টে এই বৃষ্টিপাতকে প্রায় স্বাভাবিক বলছে আবহাওয়া অফিস।
সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষাকাল বিদায় নিলেও এবছর এই মাসেও কখনও অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিভাগে ২৬৫-২৯৫ মিমি, চট্টগ্রামে ৩১০-৩২০ মিমি, সিলেটে ৩৯০-৪১০ মিমি, রাজশাহীতে ২৮০-৩০০ মিমি, রংপুরে ৩৯০-৪১০ মিমি, খুলনায় ২৬০-২৮০ মিমি, বরিশালে ৩১০-৩২০ মিমি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
গত আগস্ট মাসের পাওয়া আবহাওয়া উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু রিগ্রেশন ও এনালগ মডেল, উপগ্রহ ও রাডার চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের ১০-১৮ দিন এই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণত ঢাকা বিভাগে ২৮৯ মিমি, চট্টগ্রামে ৩১৭ মিমি, সিলেটে ৪০৭ মিমি, রাজশাহীতে ২৯৬ মিমি, রংপুরে ৪০৮ মিমি, খুলানায় ২৭৬ মিমি এবং বরিশালে ৩১৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। ১২ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত এই বৃষ্টি হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’একটি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিক বন্যারও আভাস ছিল আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, আগস্ট মাসে কোনো লঘুচাপ বা নি¤œচাপ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম না করায় এবং দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) দেশের উপর বেশিরভাগ সময় কম সক্রিয় থাকার কারণে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে আগস্ট মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’টি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় লঘুচাপটি গত মাসের শেষ দিকে ঘণীভূত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ এলাকায় স্থল নি¤œচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়। এরপর মৌসুমী বায়ু প্রবাহের অক্ষের সঙ্গে মিলে যায়। এই স্থল নি¤œচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ হয়।
বৃষ্টিপাত, বৃষ্টিপাতের দিন সংখ্যা এবং কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ দেশের নদ-নদীর অবস্থা আগস্ট মাসের পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, দেশে শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুই প্রধান হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস, গাছপালা নিধন, কল কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে কার্বন নিঃসরণসহ একাধিক কারণে উষ্ণতা বেড়েছে। এতে বাড়ছে তাপমাত্রা, বাড়ছে অনাবৃষ্টিও।
বিশিষ্ট পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটছে।
২০০৯ সালের জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ড. আইনুন। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু সংক্রান্ত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তিনি।
অনাবৃষ্টি ও কখনো অতিবৃষ্টি ফসলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ড. আইনুন।
গত কয়েক বছর থেকে দেশে অসময়ে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। ফসল ও প্রাণীকূল এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, অনাবৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা ও মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বর্ষার এই রূপ, এই পরিবর্তন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৩
এমআইএইচ/এএ/এইচএ/এসআরএস