তালা (সাতক্ষীরা) থেকে: লাখো মানুষকে জলাবদ্ধতায় বাঁচানো তো দূরের কথা, উপজেলা প্রশাসনেরই জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই মিলছে না। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা পরিষদ ভবনের চারপাশ গত দুমাস ধরে কপোতাক্ষের আটকে পড়া পানিতে ডুবে আছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরে আসা লোকজন হাঁটু পানি পেরিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন, কাজ করেন, আবার বাড়ি ফিরে যান।
তালা উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের পুরোনো ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের আশপাশের পানি অপসারণে নিজের অসহায়ত্বের কথা সরেজমিন বাংলানিউজের কাছে জানান।
কপোতাক্ষ তীরের প্রত্যন্ত উপজেলা তালার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা সদরও ডুবছে পানিতে। জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা মানুষের দুর্ভোগ দেখতে গ্রামে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তালা শহরে এসে উপজেলা পরিষদ ভবনসহ শহরতলীর কয়েকটি এলাকাতেই এ দৃশ্য চোখে পড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। আর মানুষজন পরিষদে যেতে হাঁটু পানি পার হচ্ছেন। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় ছাড়াও কয়েকটি কার্যালয়ের বারান্দায় হাঁটু পানি জমে আছে। পরিষদের এক কার্যালয় থেকে অপর কার্যালয়ে এমনকি এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যেতেও পানি পার হতে হচ্ছে। পুরোনো ভবনে জরাজীর্ণ অবস্থায় চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম।
পরিষদ ভবনের আশাপাশে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি কালো হয়ে গেছে। ছড়িয়েছে দুর্গন্ধ। রাস্তা ক্ষয়ে যাচ্ছে। পানিতে শেওলা। কচুরিপানা ভেসে এসেছে পরিষদ ভবনে। এ ভবনের সামনে পানি থাকায় পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে বাইরে থেকে আসা-যাওয়ায় সবাই এ রাস্তা ব্যবহার করেন।
পরিষদ ভবনের জলাবদ্ধতার ছবি তুলতে গেলে হাঁটু সমান পানি পেরিয়ে যেতে যেতে একজন বললেন, এখন ছবি তুলে কোনো লাভ নেই। পানি তো অনেকটাই কমে গেছে। পরিষদের সামনে আরও বেশি পানি ছিল। মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, ভবনের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দেখার তো কেউ নেই।
প্রতি বছরই কপোতাক্ষের পানি বেড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে তালা উপজেলা পরিষদ ভবনটি ক্রমেই ধ্বংসের মুখে পড়ছে। পরিষদ চত্বরের ভবনগুলোর মধ্যে অধিকাংশই পাকিস্তান আমলের। পানি জমে থাকার কারণে অনেক পুরোনো ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে।
পুরোনো ভবনে অফিস করা যাচ্ছে না বলে বিএডিসি কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিষদ ভবনের কাছের আবাসিক ভবনগুলো অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
অফিসের বারান্দায় পানি পেরিয়ে এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যাওয়ার সময় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারি বাংলানিউজকে বলেন, অনেক পুরোনো ভবনে অফিস করছি। অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রতি বছর কমাস ধরে পরিষদের চত্বর পানিতে ডুবে থাকে। বড় স্যারেরা তো দিনে একবারই অফিসে আসেন, আরেকবার বের হন। কিন্তু বার বার বাইরে যেতে হয় বলে আমাদের চরম ভোগান্তি।
জানা গেছে, কপোতাক্ষ মরে যাওয়ায় তালা উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকা ছাড়াও শহরের কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শহরের সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ খালগুলো একাধিকবার সংস্কার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু রাস্তা কিংবা উপজেলা পরিষদ ভবনের আশপাশে নয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের নিচেও জলাবদ্ধতার পানি আটকে থাকে মাসের পর মাস।
পরিষদ ভবনের দুরাবস্থার কথা জানাতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, এটা অনেক পুরোনো ভবন। একই সময়ে নির্মিত আশাপাশের কিছু ভবন এরই মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এটির অবস্থাও নাজুক। এখানে যেকোনো সময় রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আমি তালা উপজেলা পরিষদের জন্য নতুন ভবন প্রস্তাব করছি। স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করে মিটিংয়ে প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠালে নতুন ভবনের অনুমোদন পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ধরনের কোনো উদ্যোগই নেই।
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদের ভবন জলাবদ্ধতামুক্ত করতে কোনো বাজেট নেই। টেস্ট রিলিফ কিংবা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির বরাদ্দ আসে ইউনিয়নে। উপজেলা পরিষদের জন্য রাখার সুযোগ নেই। এরপরও জমে থাকা পানি সরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু কপোতাক্ষ মরে যাওয়ায় পানি একবারেই সরছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৩
আরআইএম/এসএইচ/জেসিকে