ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উদ্ভিদ যখন মাংসাশী!

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৩
উদ্ভিদ যখন মাংসাশী!

কলস উদ্ভিদ। নামটা যেমন সুন্দর, দেখতেও তেমন সুন্দর এই উদ্ভিদ।

তবে হ্যাঁ, সুন্দর হলেও পোকামাকড়দের কাছে কিন্তু সে আতংক। ছোটখাটো পোকাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে ফাঁদে ফেলতে তার জুড়ি নেই।

কলস উদ্ভিদের ইংরেজি নাম পিচার প্ল্যান্ট। বাংলায় কলস উদ্ভিদ ছাড়াও কলসগাছ নামেও পরিচিত এটি। পাতাগুলো কলসের মতো দেখতে হওয়ায় এটির এমন নামকরণ হয়েছে। এটি এক ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ।
pitcher-planet
কলস উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রজাতির হয়। প্রায় ৮০টি প্রজাতির কলস উদ্ভিদ রয়েছে পৃথিবীতে। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকা, মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকা, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির কলস উদ্ভিদ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে কলসগাছ নেই।

বিভিন্ন রকম কলস উদ্ভিদের পাতাগুলো বিভিন্ন রকম হয়। তবে মূল গঠন একই রকম। সবগুলোই দেখতে ফোলা কলসের মতো লাগে। ভেতরের অংশটা থাকে ফাঁপা। পাতার মুখের কাছে ঢাকনাও থাকে। প্রজাতি ভেদে পাতার রং, আকার, আকৃতি নানা রকম হয়। দৈর্ঘ্যে ২ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২ ফুট পর্যন্ত হতে পারে কলসী উদ্ভিদের পাতা।

কলসের মতো পাতাই হচ্ছে কলসগাছের শিকার করার অস্ত্র। এগুলো সাধারণত রঙিন হয়। কলসের সঙ্গে যুক্ত পাতাটি নলের মতো হয়। এই নলের শুরুতে থাকে প্রবেশমুখ। প্রবেশমুখে উৎপন্ন হয় এক ধরনের মধু। নলের শেষ প্রান্ত ফাঁপা ও পেয়ালার মতো আকৃতির হয়। এই অংশে জমা হয় বৃষ্টির পানি।
october_news-1
প্রবেশমুখ সবসময় খোলা থাকে। মধুর লোভে ও রংচঙে পাতা দেখে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন রকমের পোকামাকড় পাতার তা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। নলের ভেতরের অংশ পিচ্ছিল হওয়ায় পোকাগুলো আর উঠতে পারে না, বরং পিছলে আরো নিচে পড়ে যায়। নলের শেষ প্রান্তে অসংখ্য শুঙ্গ থাকে।

এগুলো সব পার হয়ে পোকাগুলো পড়ে যায় জমা হওয়া পানির ভেতরে। তারপর সেখান থেকে আর তারা বের হতে পারে না। এরপর পরিপাকে সাহায্যকারী এক ধরনের রস বেরিয়ে এসে পোকার শরীরের নরম অংশ গলিয়ে ফেলে উদ্ভিদের দেহে শোষিত হতে সাহায্য করে। শক্ত অংশগুলো জমা হয় কলসির নিচের অংশে। এভাবেই ফাঁদে ফেলে শিকার ধরে কলস উদ্ভিদ।

আকৃতিতে বড় পিচার প্ল্যান্ট ছোট ছোট পোকামাকড় ছাড়াও ইঁদুর এবং ব্যাঙও শিকার করে।

রংচঙে কলস উদ্ভিদ দেখে আকৃষ্ট হয়ে এর কাছে আসতে বাধ্য হয় যেকোনো পোকাই। আর তারপর হতভাগ্য পোকাগুলো পরিণত হয় উদ্ভিদটির খাদ্যে। সেজন্য সুন্দর দেখতে উদ্ভিদটাকে নিষ্ঠুর বললেও ক্ষতি নেই। কলস উদ্ভিদ নামক এই উদ্ভিদটি একটা মনভোলানো ফাঁদই বটে!

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।