ঢাকা: মাইকে ভেসে আসছে অনুরোধ- ‘খাঁচায় বন্দি শান্ত প্রাণিদের বিরক্ত করবেন না, কোনো খাবার দিবেন না। চিড়িয়াখানার প্রাণি জাতীয় সম্পদ, এসব প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের, সবার।
এমন অনুরোধের পরেও মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণিগুলো দর্শনার্থীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। বাইরের খাবার দিয়ে, খোঁচা দিয়ে, ঢিল ছুঁড়ে, শব্দ করে ভয় দেখিয়ে বিরক্ত করা হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বাঁদরদের অতিষ্ঠ করছে কিছু কিশোর। আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ প্রাণিগুলো ব্যস্ত বিরক্ত থেকে বাঁচতে খাঁচার মধ্যে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করার পরও কিছু কিছু মানুষ প্রাণিদের বিরক্ত করে। বিশেষ করে উৎসবের দিন বেশি বিরক্তির শিকার তারা। টহল জোরদার করা হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঢল নেমেছে দর্শনার্থীদের। হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদভারে মুখর এখন চিড়িয়াখানা।
দুপুর পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রাণির খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বানর, হরিণ, বাঘের খাঁচার সামনে ছিলো শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি।
চিড়িয়াখানায় প্রবেশ মুখের কাছেই চিত্রা ও মায়া হরিণের খাঁচার পরই বানরের খাঁচা। গরমে বেশির ভাগ বানর খাঁচার এক পাশে জড়ো হয়ে আছে। আর সেই খাঁচার চারদিকে দর্শনার্থী।
তাদের মধ্যে কিছু কিশোরকে দর্শনার্থীর সীমানা পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে খাঁচার ফাঁক দিয়ে বার বার বিরক্ত করতে দেখা যায় বানরগুলোকে। কেউ খাবার দিচ্ছে, কেউ গাছের ডাল দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে, আবার কেউ ভয় দেখাচ্ছে।
প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে দেখা যায় বানরগুলোকে বিরক্ত করার দৃশ্য। ভয়ে তারা এক কোনে জড়োসড়ো। এরই মধ্যে চিড়িয়াখানার একজন তাড়িয়ে দেয় কিশোরদের। কিন্তু আবারও আসছে কিশোর, বিরক্ত প্রাণিগুলো।
শুধু বানরের খাঁচায় নয়, হনুমান ও অজগর সাপের খাঁচাতেও দেখা যায় একই দৃশ্য। নুড়ি-পাথর দিয়ে বারবার ঢিল দেওয়ায় এক সময় শান্ত একটি অজগর মাথা তুলে এদিক-সেদিক তাকালো।
চিড়িয়াখানার শেষ মাথায় ময়ূরের খাঁচার সামনের দৃশ্য আলাদা না। প্রাণিগুলোকে নাড়াতে ঢিল ছুড়ছেন দর্শনার্থীরা।
প্রাণিদের উত্যক্ত করার কথা স্বীকার করে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, নোটিশ, অ্যানাউন্সমেন্ট এবং টহল দিয়েও এ পরিস্থিতি থামানো যায় না। যে কারণে টহল আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিদের বিরক্ত না করতে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন, যোগ করেন নজরুল।
অব্যবস্থাপনার শেষ নেই
চিড়িয়াখানায় বিপুল সংখ্যক হকারকে খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায়। ঠাণ্ডা পানি, কোমল পানীয়, শসা, বাদাম, আইসক্রিম, ময়ূরের পাখা, সিগারেট, আচার ইত্যাদি বিক্রি করছেন তারা।
অজগরের খাঁচার কাছেই বসে সিগারেট, চকলেট বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা।
ময়ূরের খাঁচার সামনে ভুভুজেলা, বাবল, বাঁশি বিক্রি করছেন আতিক নামে একজন। নিষেধ হওয়ার পরও কীভাবে এগুলো নিয়ে ভেতরে এলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাচার দোকান। আমি কিছু বলতে পারবো না।
বানরের খাঁচার সামনে একজন শসা বিক্রেতা জানান, ভেতরে ঢুকতে দেয় না, ম্যানেজ করে ঢুকতে হয়।
চিড়িয়াখানার প্রবেশ মুখের একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনের দেয়াল টপকে হকাররা ভেতরে প্রবেশ করে।
প্রধান প্রবেশ মুখের কিছুটা কাছেই ময়ূরের পাখা বিক্রি করছিলো দুই কিশোর। হঠাৎ তাদের ধাওয়া করে বের করে দিতে দেখা যায় একজনকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতজনকে বের করে দেব। বিভিন্নভাবে ভেতরে ঢুকছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমনের জন্য সকাল থেকে তিনিসহ তাদের সকল কর্মী চিড়িয়াখানায় অবস্থান করছেন।
সকাল থেকে বেশ কয়েকবার টহল দিয়েছি, কয়েকজন হকারকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নিরপত্তা রক্ষীরা কাজ করছেন, বলেন তিনি।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ভেতরে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী এবং বাইরে র্যাব-পুলিশ আছে। এছাড়া পুলিশও ভেতরে টহল দিচ্ছে।
উৎসবের দিন দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট রাখতে পারে এ জন্য প্রাণিগুলোকে সতেজ রাখতে ভিটামিন, মিনারেল দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কিউরেটর নজরুল ইসলাম।
চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান জানান, প্রবেশ ফি ২০ টাকা দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভেতরে থাকতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার ৬৪৭টি প্রাণী অাছে।
**নববর্ষের রঙে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এটি