শাবিপ্রবি: মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ও মানুষের নেতিবাচক কাজের জন্যে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরীর অস্তিত্ব।
পাশাপাশি মিঠাপানির প্রবাহ কমতে থাকলে ভারত-মিয়ানমারের মত এখানেও সুন্দরী ও পশুর বিলুপ্ত হয়ে যাবে কয়েক দশকের মধ্যেই।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমন দাবিই করেছেন। আর এ গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকার, যিনি ২০১৩ সাল থেকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করছেন।
বিখ্যাত পরিবেশ বিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা ন্যাচারের ‘ন্যাচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় “আমরা কি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদকূলকে রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছি?” শীর্ষক গবেষণাপত্রে এ দাবি করেন স্বপন কুমার। বাংলানিউজকে স্বপন কুমার জানান, সুন্দরবনের পশুর বৃক্ষও বিলুপ্তপ্রায়। অন্যদিকে অতিমাত্রায় লবণ সহিষ্ণু গরান ও গেওয়াগাছ দখল করে নিচ্ছে সুন্দরী, পশুর, কাকড়া গাছের আবাসস্থল- যা এ তিন বৃক্ষের উপর নির্ভরশীল জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীকূলের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সফরে এসেছিলেন তিনি।
তিনি জানান, তার নেতৃত্বে রয়েছেন আরও তিনজন ব্র্রিটিশ গবেষক। গবেষণায় তারা দেখান যে, সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী ও এর উপযোগী আবাসস্থল দ্রুতই সংকুচিত হয়ে আসছে।
‘Are we failing to protect threatened mangroves in the Sundarbans world heritage ecosystem?” শিরোনামের এ গবেষণাপত্র তিনি ২০১৫ সালে ন্যাচারে জমা দেন এবং ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে তার নেতৃত্বে গবেষকদল সুন্দরবনের ১২০টি স্থায়ী প্লটে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করেন।
ন্যাচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টসের এ গবেষণাপত্রে বিপন্ন উদ্ভিদকূলের বর্তমান আবাসস্থল এবং বৃক্ষের সংখ্যা ইকোলোজিক্যাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে নির্ণীত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বর্তমানে সুন্দরবনের মধ্যভাগ(খুলনা রেঞ্জ) ও পূর্বাঞ্চলে অতিলবণ সহিষ্ণু গরান বৃক্ষের বিস্তৃতির ফলে সুন্দরবনের মাটি মিঠাপানির উদ্ভিদের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। তাছাড়া অব্যাহত তেল-কয়লা বোঝাই জাহাজডুবি ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষকদল বিলুপ্তপ্রায় সুন্দরী, পশুরের আবাসস্থল বা হটস্পটগুলো রক্ষায় পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল এবং প্রযুক্তি সম্পন্ন আলাদা সংরক্ষিত এলাকা স্থাপনের দাবি করেছেন।
স্বপন কুমার সরকার জানান, সুন্দরবনের বিপন্ন উদ্ভিদকূল নিয়ে এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম। পাশাপাশি ন্যাচারে এবারই প্রথম কোন বাংলাদেশি গবেষকের সুন্দরবন উদ্ভিদ বিষয়ক গবেষণা প্রকাশ হলো। গবেষণার ফলাফল উদ্ভিদের ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে বলে গবেষকদের ধারণা।
তার গবেষণার ভিত্তিতে ২০১৪ সালে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৬
জেডএম/