ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

৫০ বছর পর উত্তরবঙ্গের আকাশে পালাসি কুরাঈগল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৬
৫০ বছর পর উত্তরবঙ্গের আকাশে পালাসি কুরাঈগল ছবি: পাখি পর্যবেক্ষক ও আলোকচিত্রী তারেক অণু

পঞ্চাশ বছর পর উত্তরবঙ্গের আকাশে পালাসি-কুরাঈগলের দেখা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বিপন্ন পাখিটির দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত পাখি গবেষক দল।

তাদের ধারণা এ অঞ্চলের জলাভূমিগুলোতে মাছের প্রাচুর্য রয়েছে বলেই মাছের ওপর নির্ভরশীল ওই ঈগলটির বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে।

হিমালয়ের তিব্বতে বছরের অর্ধেক সময় কাটায় এই ঈগলটি। তারপর ওই অঞ্চল বরফে ঢাকা পড়লে চলে আসে আমাদের দেশে। ঈগলটি শীতকালে বাসা বেঁধে বাচ্চা দেয়। এককালে আমাদের দেশের বড় বড় জলাভূমি ও নদীতে ওই ঈগলদের দেখা পাওয়া যেতো। এখন তাদের দেখা যায় মূলত মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে। সুন্দরবনেও তাদের দেখা মেলে।

সম্প্রতি একদল পাখি গবেষক উত্তরবঙ্গে অবস্থানকালে ঈগলটিকে পর্যবেক্ষণ করেন ও ক্যামেরাবন্দি করেন। গবেষক দলের প্রধান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ, লেখক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের আগস্টে আমি সুন্দরবনে সর্বশেষ ঈগলটিকে দেখেছিলাম। আগে ওরা আমাদের দেশের বড় বড় নদীতে ছিল। এখন হাওর ছাড়া তাদের আর কোথাও দেখা যায় না।

ঈগলের খাদ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যতদিন নদী বা জলাশয়গুলোতে পানি কম থাকে ততদিন পর্যন্ত এরা আমাদের দেশে অবস্থান করে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় তিনগুণ পানির ঢল নদী বা জলাশয়গুলোতে এলে ঈগলদের মাছ ধরতে অসুবিধা হয়, ফলে তারা হিমালয় পেরিয়ে তিব্বতে ফিরে যাবে। ওরা যা কিছু খায় সবই কিন্তু পাওয়া যায় বর্ষাকালে। প্রায় ছয় মাস ওরা আমাদের দেশে অবস্থান করে।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় নিরানব্বই শতাংশ পালাসি-কুরাঈগল তিব্বতে অবস্থান করে। তিব্বতে যখন বরফ গলতে শুরু করে তখন ওরা বরফের তলদেশ থেকে মাছ ধরে খেতে পারবে। বরফের নিচে মাছেরা চার-পাঁচ মাস থাকলেও মরে না। বেশ ভালো থাকে। এই গ্রীষ্মকালটা ওরা থাকবে তিব্বতে। আবার যখন অক্টোবর মাসে তিব্বতে বরফ পড়তে শুরু করবে তখন ওরা আমাদের দেশে চলে আসবে।

মাছের ওপর নির্ভরশীল এমন পাখিদের খাদ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুন্দরবন, হাওর ও উপকূল এই তিনটি অঞ্চল এখন জীববৈচিত্র্যের জন্য মোটামুটি ভালো আছে বলা যায়। আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যের বড় অংশ রয়েছে ওখানে। আর বাকি সমস্ত কিছুই দখল, দূষণ আর কর্তনের শিকার। এগুলোতে নানান ধরনের জীববৈচিত্র্য আর থাকতে পারছে না।

ঈগলটির আকৃতি সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, এর ইংরেজি নাম Pallas's Fish Eagle। আমাদের দেশে প্রায় ১৬ জাতের ঈগলের মধ্যে পালাসি-কুরাঈগল সর্বাধিক বড় আকৃতির ঈগল। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ থেকে ৮৪ সেন্টিমিটার। কালচে বাদামি দেহ। মাথা, গলা ও পিঠ সোনালি-হলুদ। লেজের মধ্যে স্পস্ট সাদা ব্যান্ড। চোখ হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ফিকে-বাদামি। ‘কুররাহ’ ‘কুররাহ’ স্বরে চিৎকার করে ডাকে।  

পাখি পর্যবেক্ষক ও আলোকচিত্রী তারেক অণু বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মায় ভ্রমণের সময় এই ঈগলটি দেখে অবাক হই। কারণ, এই অঞ্চলে পালাসি-কুরাঈগলের কোনো পালক দেখার রেকর্ড নেই। ছবি দেখে, ইনাম ভাই প্রথম দেখাতেই ঠিক আন্দাজ করেছিলেন এটি একটি তরুণ পালাসি-কুরাঈগল।

১৯৭১ সালের পর এই ঈগলটিকে রাজশাহী অঞ্চলের আকাশে উড়তে দেখার রেকর্ড নেই। আমরাই সম্প্রতি পেলাম বলে জানান তারেক অণু।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৬
বিবিবি/এএটি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।