মৌলভীবাজার: পথ চলতে গিয়ে পথের ধারের ঝোপঝাড়ের মাঝে দেখা হয়ে যায় লতাটির সঙ্গে। তবে না চিনলে বোঝার উপায় নেই যে এটি পরিবেশের উপকারী এক লতাগুল্ম।
উইকিপিডিয়ায় বলা আছে, এটি Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coccinia grandis। এর আঞ্চলিক নামও রয়েছে। সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার মানুষের কাছে এর নাম ‘কাওয়ালুলি’।
আবার পটুয়াখালী জেলায় ‘মামা সিন্দুর’ নামে পরিচিত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একে ‘কুচিলা’, ‘তেলা’, ‘তেলাকচু’, ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
এ লতাতে সারা বছরই ফুল ফোটে। তবে অপেক্ষাকৃত বর্ষায় ফুলের প্রাচুর্য থাকে বেশি। ফুলের রং সাদা, দেখতে অনেকটা লাউ ফুলের মতো। আর ফলটি দেখতে শসার মতো। স্বাদ তেতো।
তবে এই ফলটি পাকলে সিঁদুরের মতো টকটকা লাল হয়ে চারদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই লাল ফলটি খুব সহজেই পাখিদের লোভের শিকার হয়।
শালিক, বুলবুলি, নেবেবউ, বসন্তবৌড়িসহ নানান পাখিরা ফলটিকে একবার চেখে দেখার জন্য ছুটে আসে।
ছেলেবেলায় গ্রামীণ জনপদে অবহেলায়-অযত্নে জন্মানো কতো লতাগুল্ম ও ছোট-মাঝারি গাছ দেকা হয়। যদিও এখন আর সেভাবে এসবের দেখা মিলে না, হারিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে।
‘তেলাকুচা’ সম্পর্কে উদ্ভিদ ও পাখি বিশেষজ্ঞ সৌরভ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্র প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এই লতাটি। রাস্তার পাশেই এগুলো বেশি হয়।
এঁকেবেঁকে অন্য গাছ এমনকি বিদ্যুতের তার আঁকড়ে বেড়ে ওঠে তেলাকুচা লতা। কোনো পরিত্যাক্ত ঝোপঝাড়ের পাশে এদের বেশি দেখা যায়।
‘রাজধানীর বনানী লেকের পাশে অবস্থিত আমার অফিসের ব্যালকনির পাশে এসে দাঁড়ালেই দেখা যায় এক কলাগাছে ভর করে তেলাকুচি দিব্বি বেড়ে উঠেছে। তাতে ফুলও দেখা যাচ্ছে,’ বলে জানান তিনি।
গুণাগুণ প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, শিকড়, পাতা এবং কাণ্ড এই তিনটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজগুণ সম্পন্ন অংশ। চর্মরোগ, ডায়াবেটিস ও ব্রংকাইটিস এ তিনটি রোগের ওষুধ হিসেবে এটির অধিক ব্যবহার করা হয়।
লতাটির ফল-পাতা সম্পর্কে তিনি বলেন, থাইল্যান্ডসহ কিছু কিছু দেশে এই ফলটি স্যূপ হিসেবে ও এর পাতাগুলোও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। আমাদের মুন্ডা আদিবাসীরা এই লতার পাতা ও কাণ্ড পেস্ট করে সরিষা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে কানের ব্যথা দূর করতে ব্যবহার করে থাকে।
এই লতাগুল্মের ‘থ্রেড’ প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, দিন যতই যাচ্ছে মানুষ বাড়ছে। ফলে আবাসস্থলসহ কৃষিজমি তৈরি হচ্ছে। এভাবেই প্রকৃতি থেকে ঝোপঝাড়, জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার ফলে এই গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৬
বিবিবি/এমএ