শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : একসময়ের খরস্রোতা গোপলা নদী আজ সরু খাল! রাবার ড্যাম নির্মাণ করে পাল্টে ফেলা হয়েছে নদীটির গতিপথ। একটু একটু দখল করা হয়েছে প্রবাহমান নদীর জায়গা।
জেলার অন্যতম মৎস্যসম্পদ ভান্ডার ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে হাইল হাওর সুপরিচিত। এটি আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার খরস্রোতা বিলাশছড়া এবং উদনাছড়া একস্থানে মিলে ‘গোপলা নদী’ নাম ধারণ করে হাইল হাওরে গিয়ে পতিত হয়েছে। গোপলা নদীই হাইল হাওরের একমাত্র পাহাড়ি নদী।
২৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুরে গোপলা নদীর পুরাতন গতিপথ ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার উভয় পাশে বেশ কিছু মৎস্যখামার গড়ে উঠেছে। সংখ্যার হিসেবে প্রায় বিশটির মতো। মৎস্যখামারের পেটে ঢুকে গেছে নদীর জায়গা।
এছাড়াও নদীর পরিত্যক্ত হাজার হাজার একর ভূমি দখল করে প্রভাবশালীমহলের ঘর-বাড়ি তৈরির বিষয়টি তো রয়েছেই। এক সময়ের প্রাকৃতিক হাইল হাওরও এখন কৃত্রিম ফিসারি মালিকদের দখলে!
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পনেরো বছর পূর্বে এই নদীর শেষপ্রান্তে সেচের সুবিধার জন্য একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এর ফলে নদীর স্রোত কমে যায়। এ সুযোগে নদীপাড়ের প্রভাবশালীরা নদীর ভূমি তাদের ভূমির সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন। আবার নতুন গতিপথের কারণে ভূমি হারানোর শিকার কোনো কোনো মালিক নিজেদের ভূমিরক্ষার নামে নদীতে বাঁধ দিয়ে গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। ফলে গোপলার প্রবাহ আজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
আরো আশ্চর্যের বিষয়, এলাকায় ব্যাপকভাবে পরিচিত গোপলা নদীকে রহস্যজনক কারণে ‘লংলা নদী’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রাবার ড্যামের পাশে গাঁড়া হয়েছে লংলা’র সাইনবোর্ড।
গোপলা নদী কেন লাংলা নদী হলো -এ বিষয়ে আশীদ্রোণ ইউনিয়নের শেখ মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, এটা সহজ হিসাব! নদী খননসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করাই নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্য। এছাড়া আরো নানা ধরনের অপকৌশল থেকে থাকতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার দুজন তরুণ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় বিশ বছর আগে নদীর গতিপথ প্রভাবশালীরা পাল্টে দিয়েছেন। পূর্বের অবস্থায় নদীকে ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পিত উপায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বললেই চলে। পুরাতন নদীটি খননের জন্য কিছু অনুদান আসার পর অপরিকল্পকভাবে কিছু অংশ খনন করে পুরো টাকাটাই লুটপাট করা হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আব্দুল হান্নান, রুমিম মিয়া, উজ্জ্বল আহমেদ, আমান উদ্দিন প্রমুখের দখলে নদীর জায়গাগুলো। তারা এখানে মহিষ-গরু প্রভৃতি রেখে জায়গাটি দখল করে রেখেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোপলা নদী দখল করে ফিসারি ও ঘর-বাড়ি তৈরি করায় বর্ষার সময় পাহাড়ি ঢল নেমে এলে তা স্বচ্ছন্দে প্রবাহিত না হবার ফলে একাধিক স্থানে নদীরপাড় ভেঙে ঘর-বাড়ি প্লাবিত করছে। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকার ফসলে জমি বিনষ্ট করছে।
মতিগঞ্জ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি তালেব আলী বলেন, গোপলা নদীকে পূর্বের গতিপথে ফিরিয়ে নিতে গেলে নতুন গতিপথের মধ্যে শক্তিশালী দীর্ঘ একটি বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটারের মৃত নদী পথটি প্রশস্তভাবে খনন করতে হবে। এর ফলে গোপলা তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবে। আমন-বোরো চাষিরা তাদের জমি ফিরে পাবেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিৎ পাল বাংলানিউজকে বলেন, নদীর জায়গা যদি কেউ দখল করে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
বিবিবি/জেডএম