লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হলো ইভাকে, তবে নজরবন্দি থাকবে ইন্ডিগো।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে অজগর দু’টি অবমুক্ত করা হয়।
মুক্তির সময় বেশ উত্তেজিত ছিলো ইভা আর ছাড়ার পরই রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করা ইন্ডিগো বনের ভেতরে চলে যায়। গত দুই বছর যাবৎ রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে সাপটি অনুসরণ করছিলেন গবেষকরা। তখনই ইভা নামকরণ করা হয়।
কিছুদিন আগে ইভা বন পেরিয়ে লোকালয়ে চলে গিয়ে জালে আটকা পড়ে। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা অজগরটি উদ্ধার করে এনে দেখেন, ইভার শরীরে থাকা ট্রান্সমিটারটি নষ্ট হয়ে গেছে! এবার ট্রান্সমিটার ছাড়াই মুক্ত করা হলো সাপটি।
তবে ইন্ডিগোর চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করবেন গবেষকরা। ইভা এবং ইন্ডিগো দুটিই স্ত্রী লিঙ্গের।
ইভাকে নিয়ে গবেষণা করছেন অজগর গবেষণা প্রকল্পের গবেষক ও প্রখ্যাত সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ শাহরীয়ার সিজার রহমান। মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত দু’বছরে দেখা গেছে, ইভা বেশক্ষণ বনে থাকছে না। বারবারই বাইরে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে।
তিনি জানান, গবেষণার মাধ্যমে আমরা অজগরের জীবন পদ্ধতি, কোথায় যাচ্ছে, কি খাচ্ছে, শীতকালে-গ্রীষ্মকালে কোথায় অবস্থান করে সেগুলো সম্পকে ধারণা পেয়েছি।
২০১৩ সালে তিনিই প্রথম এশিয়ার মধ্যে অজগর নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। প্রথমে আশা, এরপর বনি, চৈতী, ডিন, ইভা, ফিরোজ, গোলাপি, হাসান ও ইন্ডিগো’র শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে তিনি গবেষণা শুরু করেন। লাউয়াছড়ায় এ পর্যন্ত ৯টি অজগরের শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার লাগানা হয়েছে। যার মধ্যে চারটি ট্রান্সমিটার সরিয়ে সাপগুলো মুক্ত করা হয়েছে।
“ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে লিঙ্গ ভেদে অজগরগুলোর নাম রাখা হয়েছে”, বলেন তিনি।
এ গবেষণায় সহকারী হিসেবে কাজ করছেন স্বপন। তিনি জানান, সাপ দু’টি ছয় ফুট লম্বা। ওজন প্রায় ৭ কেজির মতো।
বিলুপ্তপ্রায় অজগরের উপর গবেষণা চালিয়ে বংশ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতেই রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
রেডিও ট্রান্সমিটারটি সাধারণ রেডিওর মতোই। এটিরও নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি (মেগাহার্জ) রয়েছে। এর সাহায্যে গবেষকরা বুঝতে পারেন অজগরের অবস্থান।
একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অজগরের পেটের নিচে অনেকটা পেন্সিল ব্যাটারির মতো ট্রান্সমিটারটি যুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবে লাউয়াছড়ায় অজগরের উপর গবেষণা চলছে কয়েক বছর ধরে।
দেখা গেছে, সিলেট বনাঞ্চলের অজগরগুলো প্রায়ই লোকালয়ে চলে যায়। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত তিনবছরে অর্ধশতাধিক অজগর লোকালয়ে যাওয়ার পর ধরা পড়েছে।
অজগর একটি বিষহীন সাপ। এরা শিকারকে পেঁচিয়ে প্রচণ্ড চাপে হত্যার পরে খায়।
মাস ছয়েক আগে এই লাউয়াছড়ায় একটি হরিণ গিলে খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ওই সময় প্রায় তিন ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের অজগরটি ১৬ থেকে ১৮ কেজি ওজনের একটি হরিণকে গিলে ফেলে।
ওই দৃশ্য দেখতে আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকে ভিড় জমায়।
এছাড়া গত বছর নওগাঁর ধামইরহাটের আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে ক্ষুধার্ত অজগরের শিকার হয় এক শিয়াল।
বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকা, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারে অজগরের দেখা মেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এসএ/এটি