শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): লতাগুল্ম জাতীয় গাছের গায়ে জন্ম থেকেই বাদুরের মতো ঝুলে থাকে গোলমরিচ। ডাটায় ডাটায় তার বিন্দু বিন্দু অসংখ্য দানার সমাহার।
উৎকৃষ্ট এক প্রকারের ভেষজ গোলমরিচ। শারীরিক নানান জরাব্যাধি দূরীকরণে এর গুণাগুণ অনন্য। এছাড়াও রন্ধনশিল্পে স্বাদের ভিন্নতা আনয়নে এর রয়েছে অগ্রগণ্য ভূমিকা।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির অনেক গাছে এখন উৎপন্ন হচ্ছে গোলমরিচ। এখানকার নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরা খাসিয়াপানের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করছেন গোলমরিচ। এতে বেশ লাভবান তারা। পানের মতোই সফলতা এনে দিয়েছে এ কৃষিজাতপণ্যটি।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) উটিয়ান তংপেয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পানপুঞ্জিতে কিছু কিছু গাছে অনেকদিন থেকেই গোলমরিচ চাষ করে আসছি। উৎপাদনখরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি ভালোই আয় হয়। পাইকারি প্রতি কেজি পাঁচশত টাকায় বিক্রি করছি আমরা।
খেতে বেশ ঝাল। তবে তা সহ্যের মধ্যে। নাগামরিচের মতো এতো তীব্র ঝাল নেই এ গোলমরিচে বলে জানান বয়োবৃদ্ধ উটিয়ান তংপেয়ার।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুকল্প দাস বাংলানিউজ বলেন, এর ইংরেজি নাম Black pepper। Piperaceae গোত্রের একটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। খাসিয়াপানও একই সমগোত্রীয় ফসল। প্রথম অবস্থায় ফল হিসেবে গাছ থেকে পেড়ে শুকিয়ে মসলা হিসেবে গোলমরিচকে ব্যবহার করা হয়।
এর উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গোলমরিচ জন্মে। চা উৎপাদনে যে রকম অম্লীয় মাটি এবং উঁচু-নিচু টিলার প্রয়োজন গোলমরিচের জন্যও তেমনি। অর্থাৎ যেখানে কোনো পানি আটকাবে না এমন ঢালু জায়গায় ভালো জন্মে। এছাড়াও এ গাছটি যেহেতু বড় গাছের শরীর বেয়ে উপরে উঠে তাই একটু ছায়াময় এলাকার গাছগুলো পছন্দ করে গোলমরিচ।
তিনি আরো বলেন, এপ্রিল-মে মাসের দিকে লতা কেটে কলম করে বড় গাছের পাশের লাগাতে হয়। যাতে ওই গাছের শরীরে বেয়ে সে খাসিয়াপানের মতো উপরে উঠতে পারে। গাছ লাগানোর তিন থেকে পাঁচ বছর পর ফল আহরণ করা যায়। একবার ফল দেয়া শুরু করলে এ গাছ মোটামুটি বিষ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। একটি গোলমরিচ গাছ থেকে প্রতি বছর দেড় কেজি গোলমরিচ ফল আহরণ করা সম্ভব।
মে-জুন মাসে গাছে ফুল আসে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর তা ফলে রূপান্তরিত হয়। এর ফলটা লাল রঙের হয়ে থাকে। এই গোলমরিচ জ্বর-সর্দি, উদরাময়সহ নানা রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে বলে জানান এ কৃষিবিদ।
কথাপ্রসঙ্গে সুকল্প দাস নিজের একটি অভিজ্ঞতা যুক্ত করে বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার একবার আমি দায়িত্ব পালন করেছি। ওই এলাকাটি প্রচন্ড শীতপ্রধান একটি এলাকা। আমার কৃষি অফিসের এক স্টাফ তীব্র শীতে হাফশার্ট পরে মোটরবাইক চলাতেন। ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চারপাশসহ আমরা যখন একেবারে জুবুথুব তখন ওই লোক এ অবস্থায় দিব্বি ঘুরে বেড়াতেন।
বেশ কৌতুহলী হয়ে ‘এটা কীভাবে সম্ভব’ জিজ্ঞেস করাতে তিনি আমাকে গোলমরিচ ব্যবহারের কথা জানিয়ে অবাক করেছিলেন। এটি খেলে নাকি তার কোনোপ্রকার শীত অনুভূত হতো না। এমনি অব্যর্থ গুণসম্পন্ন গোলমরিচ।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
বিবিবি/এসএইচ