ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিষটোপে মরে হাজার হাজার 'পরিযায়ী পাখি'!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
বিষটোপে মরে হাজার হাজার 'পরিযায়ী পাখি'! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘বিষটোপের মাধ্যমে হাজার হাজার ‘পরিযায়ী পাখি’ মেরে ফেলা সম্ভব। ব্যবহৃত বিষের মূল্য অত্যন্ত কম বলে পরিযায়ী পাখি শিকারের ক্ষেত্রে এ বিষটোপকেই বেছে নেন হাওরাঞ্চলের অভাবি মানুষ। তাই পরিযায়ী পাখিদের বসবাসস্থল বিপদমুক্ত করতে বিষটোপ বন্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে’।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ‘বিষটোপের মাধ্যমে হাজার হাজার ‘পরিযায়ী পাখি’ মেরে ফেলা সম্ভব। ব্যবহৃত বিষের মূল্য অত্যন্ত কম বলে পরিযায়ী পাখি শিকারের ক্ষেত্রে এ বিষটোপকেই বেছে নেন হাওরাঞ্চলের অভাবি মানুষ।

তাই পরিযায়ী পাখিদের বসবাসস্থল বিপদমুক্ত করতে বিষটোপ বন্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে’।
 
বাংলানিউজকে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।  

সম্প্রতি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে পরিযায়ী পাখিরা এখন আমাদের দেশে দলে দলে আসছে। জলজ উদ্ভিদ খেয়ে, পানিতে অক্সিজেন মিশিয়ে এবং বিষ্ঠা ফেলে হাওরগুলোকে উর্বর করে থাকে এরা। এদের কারণেই আমাদের বিল-হাওরগুলোর প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।  
 
ইনাম আল হক বলেন, ‘শীত মৌসুমে পরিযায়ী এই পাখিগুলোকে জাল, ফাঁদ বা ফাঁসের ফাঁদ দিয়ে ধরা হয়। তবে হাওরাঞ্চলে পাখি ধরার সবচেয়ে বিপজ্জনক পদ্ধতি হলো ‘বিষটোপ’ বা বিষ দিয়ে পাখি মারা। এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্করও। বলা যায়, বিনা খরচেই শত শত পরিযায়ী পাখি মেরে ফেলা যায়। ফসলের ক্ষেতের কীটনাশক বিষ এটি। এটি ভয়ঙ্কর এ জন্য যে, যে কেউ এটি করতে পারেন এবং তাকে ধরাও কঠিন। কারণ, এক প্যাকেট বিষ কিনে নিয়ে তিনি ছিটিয়ে এলেন। কিছুক্ষণ পর থেকে পাখিগুলো মরতে শুরু করলো’।
 
‘এই বিষটোপ আরো খারাপ এজন্য যে, কতো পাখি এতে মরবে, তার কোনো সঠিক হিসেব নেই। পাঁচ-দশ দিন ধরে হাজারে হাজারে মরতে থাকে জলাশয়ের পাখিরা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ওই হাজার হাজার মরে যাওয়া পাখিগুলো তো সেই বিষটোপ দেওয়া লোকটির কোনো উপকারে আসছে না। তিনি হয়তো ভোর হওয়ার আগেই মৃতপ্রায় ৮টা কি ১০টা পাখি ধরতে পারেন। কিন্তু এর বিষেই মরে গেলো ৫ হাজার। ফলে বিষ ছিটিয়ে ওই লোকটি খুব সামান্যই উপকার পেলেন। কিন্তু ধ্বংস করে ফেললেন হাজার হাজার প্রাণ। ব্যাপারটি অনেকটা পাহাড়ি বন পোড়ানোর মতোই। যিনি বন পোড়ান, তিনি কিন্তু কোনো উপকৃত হন না’।  
 
পাখি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইনাম আল হক বলেন,  ‘আমরা ২০০৩ সালে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে সবচেয়ে খারাপ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তখন ২০ হাজার পাখি বিষটোপে মারা গিয়েছিল। আমিও মৃত পাখিগুলোকে দেখে এসেছিলাম। এখনো হাকালুকি হাওরে অতি বিপজ্জনক এ বিষটোপের প্রচলন রয়েছে’।  
 
‘বিষটোপের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির পাশাপাশি এ সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে যে, বিষ দিয়ে কিছুই মারা যাবে না। বিষ দিয়ে মানুষ মারা যেমন খারাপ, পাখি মারাও তেমনি খারাপ। এমন সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যেন হাকালুকিতে এটি বন্ধ হয়। কারণ, এর উৎসই হলো হাকালুকি হাওর’- বলেন এই প্রখ্যাত পাখি গবেষক।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬ 
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।