খেয়া পাড়ে বা মাছ ধরতে বর্ষায় হাজারো নৌকা নিয়ে অবারিত ছুটে চলা মাঝি-মাল্লাদের দৌঁড়-ঝাঁপ থেমে গেছে। পানি আর মাছভর্তি তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে ধু ধু বালুচর।
জানাযায়, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে এ নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে সেই দেশের সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসন মূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু-ধু বালুচরের তিস্তার উপর। ব্রিজ থাকলেও পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে অনেকেই। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালুকনা।
তিস্তা নদীতে মাছ আহরণ করে শুটকি ও মাছ বিক্রি করে জীবনযাপন করতেন এ অঞ্চলের জেলেরা। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়ও মাঝি-মাল্লারাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
খেয়াঘাটের মাঝি সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পানি নাই নৌকা কোথায় চালাই, সবাই হেঁটেই পার হচ্ছে তিস্তা।
তিস্তা পাড়ের জেলে শহির মিয়া, মহির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, পানি না থাকায় মাছ নেই তিস্তায়। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তারা।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম। এ বছর সেচ প্রকল্প সচল রাখাই কষ্টকর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
এনটি