লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম বাগমারা এলাকার কৃষক ফারুক। চলতি মাসে তার একটি গরু মারা গেলে আলোচনায় আসে রাম কুত্তার নাম।
ফারুক মিয়া অন্যান্য দিনের মতো ০৮ ফেব্রুয়ারিতেও নিজের গরুটিকে বনের ভিতর ছেড়ে দেন। সন্ধ্যায় গরুটি ফিরে না এলে চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। নানান জায়গায় খোঁজ করতে থাকেন। পরের দিন সন্ধ্যায় এক বনকর্মী গরুটিকে বনের ভিতর পড়ে থাকতে দেখে ফারুক মিয়াকে খবর দেন।
সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ির অদূরে বনের ভিতর যান ফারুক মিয়া। গরুর কাছে গিয়ে টর্চের আলোয় পড়ে থাকা গরুর পাশে রাম কুত্তা দেখতে পান। রামকুত্তা দেখে গ্রামবাসী পিছু হটতে থাকে। পরে ফারুক মিয়াসহ কয়েকজন চিৎকার করে এগিয়ে গেলে পালিয়ে যায় বন্য কুকুরটি।
গরুটির কাছে গিয়ে দেখেন মাথার অংশ ও পেট চিরে কলিজা খেয়ে ফেলেছে বন্য প্রাণীটি। যা হুবহু বন্য কুকুরের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায় বলে দাবি করেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি ইউনুস আলী।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এভাবে রাম কুত্তা শিকার করে। আমরা স্বাধীনতার পরেও এমন ঘটনা দেখেছি। রাতে এসব কুত্তার ডাক নিজ কানেও শুনেছি।
ফারুক মিয়ার গরুর আগেও সিরাজ মিয়ার গরু ও অন্যদের ছাগল লাপাত্তা হয়ে গেছে। যে কারণে বিষয়টি এখন ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তবে বনবিভাগ বা প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বণ্য কুকুর থাকার বিষয়ে একমত হতে পারছেন না। তারা মনে করছেন প্রাণীটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। লাউয়াছড়ায় থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেছেন, বন্য কুকুর থাকার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অনেকে লাউয়াছড়া নিয়ে কাজ করছেন কারো নজরেই আসেনি। তবে ক্লাউডেড লেপার্ড (গেছো বাঘ) হতে পারে।
মনিরুল এইচ খান জানান, গোছো বাঘ একইভাবে শিকার করে থাকে। আর একটি বন্য কুকুরের পক্ষে গরু শিকার করা সম্ভব না। এরা দল বেঁধে থাকে। যদি দল থেকে থাকতো তাহলে কারো না কারো নজরে পড়তো।
সম্প্রতি যানবাহনের ধাক্কায় একটি কুকুর ছানা মারা পড়ে লাউয়াছড়ায়। তখন এটাকে বন্য কুকুর বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। দুর্ঘটনায় কুকুর ছানাটির আকৃতিও কিছুটা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি চাপা পড়ে যায় তখন।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনেছি বন্য কুকুরের গরু শিকার করার কথা। সবাইকে নজর রাখতে বলেছি। এখানে অনেক বিলুপ্ত প্রাণীর দেখা মিলছে। বন্য কুকুর থাকলে আমাদের জন্য সুখবর বলতে হবে। অন্যকোনে এলাকায় এর অস্তিত্ব আছে বলে আমার জানা নেই।
তবিবুর রহমান আরো বলেন, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মালি মনির হোসেন সম্প্রতি একটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন। আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই নজরদারি বাড়িয়েছি।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান:
রাজধানী ঢাকা থেকে ২শ’ কিলোমিটার। আর শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে ১২শ’ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে আড়াই হাজারের অধিক প্রজাতির পাখি, দশ প্রজাতিক সরীসৃপ, মেছো বাঘ, ভাল্লুক, উল্লুক, অর্ধশত প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। নিবিড় ঘন ও ছোট বড় দেশি-বিদেশি নানান রকমের বৃক্ষে ভরপুর এ উদ্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
এসআই/এমজেএফ