এর ফলে পার্শ্ববর্তী ব্রিজের একপাশের মাটি ধসে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ব্রিজটি। এছাড়া ছড়ার দুই পাশের মাটিও ধসে পড়ছে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে গায়ের জোরে এসব চললেও, নিরীহ মানুষের কৃষিজমির বারোটা বাজালেও প্রশাসন নির্বিকার। তারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভাণ করছে।
এই অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জানেন না খোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। জানেন না শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনও। এমনটাই দাবি তাদের। এ অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে।
গত ১২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের পশ্চিম সাইটোলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুটিয়াছড়ার ৩/৪ অস্থায়ী ঘাট তৈরি করে চলেছে বালু উত্তোলন। এর ফলে কৃষিজমি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি পাশের সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নিষেধ না মেনে গায়ের জোরে নির্মল কুর্মির পরিবারিক কবরস্থানের উপর বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই অভিযোগকারীকে নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়। অভিযোগকারীদের গ্রামছাড়া করাও হুমকি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ৩ বছর ধরে এই পুটিয়াছড়ায় বালু তোলা চলছে। শ্রীমঙ্গলের অন্য সব ছড়ার বালুর চেয়ে এই পুটিয়াছড়ার বালুর দাম বেশি। প্রতি ফুট ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অন্যসব ছড়ার বালুর দাম প্রতি ফুট ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টি ডায়ানা গাড়িতে করে বালু বিক্রি হয়। প্রতি গাড়ি বালুর দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের করিম মিয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দা মনির মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নিরীহ মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেখিয়ে তাদের জমি-জায়গায় উপর দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন শ্রীমঙ্গলের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী।
অভিযোগের ব্যাপারে ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। এক সময় ডাক আনতাম; এখান আর এসবের সঙ্গে জড়িত নই। এই পুটিয়াছড়ার ডাক এনেছেন মোকন মিয়া। তবে বর্তমানে এটিসহ শ্রীমঙ্গলের বেশি কিছু ছড়ায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ’
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। উল্টো তাদের কপালে জুটেছে হুমকি ধমকি।
এ বিষয়ে মামুদ মিয়া, শাজিদ মিয়া এবং মাসুক মিয়া বলেন, এখানে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে গাঙ্গের পাড় (ছড়ার পাড়) একটু একটু করে ভাঙছে।
কালাই মিয়া, হারুন মিয়া এবং মজু মিয়া বলেন, ‘এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে কিছুদিন পর আমাদের বসতবাড়ি ছড়ার মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। তখন আমরা কোথায় যাবো!’
এলাকার কাউন্সিলার রিপন রায় বলেন, ‘আমি শুনেছি পুটিয়াছড়া থেকে থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কিন্তু কে বা কারা এর সাথে জড়িত তা তো জানি না। ’
সিঁন্দুরখান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হেলাল বলেন, ‘বালু তোলা তো সারা উপজেলাতেই চলছে। শুধু সিঁন্দুরখানে কেন? এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ’
শ্রীমঙ্গলের পরিবেশবাদী সংগঠন পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বর্তমানে বালু তোলার কোনো বৈধতা নেই। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কোনো প্রকার নীতিমালা না মেলেই প্রতিদিন বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে ছড়ার দুই পাড়, কৃষিজমিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছি। ’
শ্রীমঙ্গলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
বিবিবি/জেএম