এরপর ২০০৬ সালে প্রাণীটির দু’টি শাবক কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে আনা হয়।
গাজীপুরে রাখা ওয়াইল্ড বিস্ট দম্পতির ঘরে যুগ পার হলেও এখনও কোনো নতুন অতিথি আসেনি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, এ নিয়ে দু’টি শাবক জন্ম দিলো ওয়াইল্ড বিস্ট দম্পতি, যা দেশের জন্য বিরল ঘটনা। ঢাকার কাছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একই প্রজাতির ওয়াইল্ড বিস্ট থাকলেও প্রজননের ক্ষেত্রে এখনও সফলতা আসেনি। চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এক বছর পর ওয়াইল্ড বিস্টের ঘরে দু’টি শাবক প্রসবের ঘটনা রীতিমতো অবাক করার মতো। পার্ক কর্মকর্তারা জানান, ওয়াইল্ড বিস্ট দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী। ঘাস, সবজি ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই প্রাণীর প্রজনন হয়। সর্বোচ্চ ২৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ওয়াইল্ড বিস্ট। এই বন্যপ্রাণীর গড় উচ্চতা ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। জন্ম নেওয়া শাবক পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। তবে বয়স তিন মাস হলেই একটু একটু করে কচি ঘাস খেতে শুরু করে। প্রাপ্তবয়স্ক ওয়াইল্ড বিস্ট ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। বয়স সাত থেকে আট মাস হলেই প্রজনন ক্ষমতা আসে ওয়াইল্ড বিস্টের।
সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ মে) নতুন করে জন্ম নেওয়া ওয়াইল্ড বিস্টের শাবকটি মায়ের সঙ্গে খেলছে, মায়ের দুধ পান করছে। সদ্য জন্ম নেওয়া শাবকটির ওজনও স্বাভাবিক। শাবকটি সুস্থ আছে। এই প্রজাতির ওয়াইল্ড বিস্টের বৈজ্ঞানিক নাম কননোচেটেস গনোও (Connochaetes gnou)।
তিনি আরও জানান, গতবছরও একটি শাবক জন্ম দিয়েছে এখানকার ওয়াইল্ড বিস্ট দম্পতি। এনিয়ে ২০০৬ সালে পার্কে প্রথমবারের মতো আনা ওয়াইল্ড বিস্টের সংসারে বতর্মান সদস্য সংখ্যা চার। এর মধ্যে একটি পুরুষ, বাকি তিনটি স্ত্রী।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, কালো প্রজাতির ওয়াইল্ড বিস্ট দম্পতির মা তার শাবক নিয়ে ঝোপের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। শাবকটি মায়ের দুধ খাচ্ছে, লাফালাফি করছে। বেষ্টনীর কাছে লোকজনের উপস্থিতি টের পেলেই নিরাপত্তার জন্য শাবকটিকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর চলে যায় মা।
সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক কেএম মোর্শেদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কালো প্রজাতির ওয়াইল্ড বিস্ট রয়েছে। গাজীপুর সাফারি পার্কে এখন পর্যন্ত ওয়াইল্ড বিস্ট শাবক জন্ম না দিলেও পর পর দু’বার শাবক দিয়েছে ডুলাহাজারা পার্কের দম্পতি, যা বিরল ঘটনা।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এসএম গোলাম মওলা বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াইল্ড বিস্ট দম্পতিকে বাংলাদেশে আনার পর সরাসরি নিয়ে আসা হয় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা চকরিয়ার ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। এখানে এসে তৃণভোজী এই প্রাণী খুঁজে পায় আগের সেই আবাসস্থল। এজন্য এখানকার পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খেয়ে যায় তারা। আর এতেই প্রজননের ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে।
বাংলাদেশ সময় ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৮
টিটি/এএটি/এএ