এই পাখিটির অপর একটি বাংলা নাম ‘দাগিগলা-কাঠকুড়ালি’। বৈজ্ঞানিক নাম Picus xanthopygaeus।
পাখিটির বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দাগিগলা-কাঠঠোকরা’ কিছুটা বিরল প্রজাতির পাখি। অন্যান্য কাঠঠোকরাদের যেমন সচরাচর পাওয়া যায়, একে সহজে পাওয়া যায় না। এটি কিছুটা সবুজ রঙের দেখতে। গলার মাঝে লম্বা লম্বা দাগ আছে, এ কারণে পাখিটির ইংরেজি নাম Streak-throated Woodpecker।
খাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব কাঠঠোকরাই পতঙ্গভুক পাখি। যে গাছের বাকল (শরীরের অংশ) আলতোভাবে লেগে থাকে সেই গাছের চারপাশে কাঠঠোকরা বেশি ঘোরাফেরা করে। এর অর্থ হলো সেই গাছের বাকলের নিচের লুকিয়ে থাকা পোকাগুলো এরা খায়। ঠোকর দিয়ে গাছের বাকলটি ফেলে দিলে এর নিচ থেকে যে পোকা বা পোকার লার্ভা বের হয় সেগুলো ওরা খায়। এছাড়াও গাছের যে জায়গায় পচা অংশ থাকে সেখানেই ওরা বেশি ঘুরে। কারণ ওইখানেই পোকা থাকবে এবং পোকার লার্ভা থাকবে। ও গুলোই ওদের খাবার।
উপকার সম্পর্কে ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে সব কাঠঠোকরাই আমাদের অনেক উপকার করে। অনেক ধরণের পতঙ্গভুক পাখি আছে যারা গাছের পাতা থেকে পোকামাকড় ধরে ধরে খায় বা ঘাস থেকে পতঙ্গ ধরে খায়। কিন্তু কাঠঠোকরাই একমাত্র পাখি যাদের ‘গাছের চিকিৎসক’ বলা হয়। কারণ গাছের যেখানে পচা অংশ বা ভাঙা অংশ থাকে সেখানেই বিষাক্ত পোকা অবস্থান করে ডিম দেয়। সেই ডিম থেকে বাচ্চা হয়ে গাছেরই ক্ষতি করে। কাঠঠোকরা এসে সেই গাছের পচা অংশ থেকে ক্ষতিকর পোকা বা সেই পোকার ডিমগুলো খেয়ে গাছের উপকার করে।
তিনি আরো বলেন, একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখা যায়, কাঠঠোকরা কিন্তু গাছের শরীরে খাদ্য অনুসন্ধানের সময় অনেক জোরে জোরে শব্দ করে। এটা তার ইচ্ছে করে না। তাদের ঠোঁট খুব শক্ত হওয়ায় গাছের বাকল ভাঙার সময়ে এমন শব্দ হয়।
সাধারণ মানুষ মনে করে- কাঠঠোকরা পাখিগুলো গাছের গায়ে বসে গাছের শরীর ছিদ্র করে গাছকেই নষ্ট করে। আসলে তাদের ধারণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে কাঠঠোকরা গাছের উপকার করে থাকে। এই কাঠঠোকরা বিশেষ প্রজাতির পাখি যারা গাছের গায়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকর পোকামাকড়-কীটপতঙ্গদের ঠোঁট দিয়ে বের করে খেয়ে গাছকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
বিবিবি/এনটি