অনেকেই কদম ফুলকে বর্ষার অন্যতম সুদর্শন ফুল হিসেবে চিনে এসেছেন। অনেকের পছন্দের ফুলের তালিকায় জায়গা করে আছে বর্ষার কদম।
কদম কি তবে বর্ষার ঘনঘোর বৃষ্টিধারা আর সহ্য করতে না পারে অপরূপ হিম স্নিগ্ধতাময় হেমন্তে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে? নাকি এটি বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া? নাকি এটি তার সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য– যা এতোকাল লুকায়িত ছিলো প্রকৃতির কোণে?
কদম ফুলকে বৃত্তপুষ্প, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক প্রভৃতি বাংলা নামে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম Burflower tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Neolamarckia cadamba।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, কদম ফুলকে এখন হেমন্তে ফুটতে দেখা যাচ্ছে। আমি কয়েক বছর ধরে এটি লক্ষ্য করছি। কোনো কোনো কদম গাছে বছরে দু’বার আমরা ফুল ফুটতে দেখে আসছি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর প্রধানত দু’টো কারণ হতে পারে। একটি হলো- জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব। জলবায়ুগত পরিবর্তন অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের ধরণ, তাপমাত্রার সময়, তাপমাত্রার উঠানামা প্রভৃতি পরিবর্তনগুলোর কারণে উদ্ভিদের ফুল ধারণের জন্য যেসব কেমিক্যাল, হরমোন এবং এনজাইম প্রয়োজন সেগুলো তাপমাত্রার উঠানামার ফলে বৃক্ষের ফুল ধারণ কার্যক্রমে পরিবর্তন হতে পারে। হয়তো দ্রুত ফুল ফুটতে পারে কিংবা ফুল ফুটতে বিলম্ব হতে পারে। এ প্রভাব সুদূরপ্রসারিও হতে পারে।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও প্রতিবছর দু’বার করে কদম ফুল দিচ্ছে সেহেতু অন্যকারণও থাকতে পারে। আর এটি হতে পারে যে, প্রকৃতি নিজ থেকেই তাকে একাধিকবার ফুল ধারণে বাধ্য করছে। অর্থাৎ বছরে দু’বার ফুল ধরা তার সহজাত বৈশিষ্ট্যও হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু প্রজাতির গাছকে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। যেমন- ছাতিম। গতবছর ছাতিমকে আমরা তিনবার ফুল দিতে দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, যে গাছগুলো একাধিকবার ফুল দেয় সে গাছগুলো পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশকে সার্ভিস দেবার জন্য সে ফল তৈরি করে। পরিবেশকে সার্ভিস অর্থাৎ সেবা দেয়া মানে পশু-পাখি প্রভৃতির কথা এখানে বোঝানো হচ্ছে। প্রকৃতির যেসব পশুপাখিসহ নানা জীববৈচিত্র্য তার উপর নির্ভরশীল তাদের সে একাধিক সময় খাদ্যের জোগান দেয়। কদমও এরূপ একটি বৃক্ষ; এ বিষয়টিও আমরা অনুমান করছি।
কদম ফুলই শুধু নয়, যে বৃক্ষগুলো বছরে একবার ফুল দেবার কথা থাকলেও যাদের বছরে একাধিকবার ফুল দিতে দেখা যাচ্ছে, এমন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে আমাদের এসব ধারণাকে চূড়ান্ত করতে গেলে সুদূরপ্রসারি পরীক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
বিবিবি/আরবি/