ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ভালোবেসে ৩৭টি দেশি পাখি উদ্ধার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৮
ভালোবেসে ৩৭টি দেশি পাখি উদ্ধার উদ্ধার করা হচ্ছে পাখিদের ছবি: বাংলানিউজ  

মৌলভীবাজার: নিজের ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন তারা। নিজেদের কাজ করতে করতে হঠাৎ দেখলেন একজন পাখিবিক্রেতা অবৈধভাবে কিছু পাখি খাঁচাবন্দি করে এলাকায় বিক্রি করছে। নিজেকে আর স্বাভাবিকভাবে ধরে রাখতে পারেননি তারা। কাজ ফেলে খাঁচায়বন্দি বিপন্ন প্রাণীগুলো উদ্ধার করেন।

রাজধানীর অদূরে সাভার এলাকা থেকে দুই বন্যপ্রাণী গবেষকের সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পায় পাখিগুলো। এর মধ্যে ছিল ১০টি তিলি-ঘুঘু (Western Spotted Dove), ২৬টি তিলা-মনিয়া (Sealy-breasted Munia) এবং একটি লালবুক টিয়া বা মদনা-টিয়া (Rad-breasted Parakeet)।


 
এই দুই গবেষক হলেন-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান এবং অপর বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
 
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সাভারের একটি খাবার হোটেলে ড. কামরুল হাসান স্যারের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে বলেন, এক পাখি বিক্রেতা অনেকগুলো পাখি বিক্রি করছে। এই পাখি বিক্রেতাকে আমি এর আগেও এ কাজ করতে নিষেধ করেছিলাম।
 
তিনি আরও বলেন, তারপর আমরা দু’জনে মিলে যাই। স্যারের নির্দেশে খাঁচায় বন্দি পাখিগুলো জব্দ করতে চাইলে পাখি বিক্রেতা এবং স্থানীয় জনগণ আপত্তি জানায়। ইতোমধ্যে দু’টো তিলি ঘুঘু খাঁচা থেকে বের করে স্যারের হাতে দেই আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। একটি আকাশে উড়ে যেতে পারলেও অন্যটি একটু উড়ে পার্শ্ববর্তী দোকানের চালের উপর পড়ে যায়।
 
আদনান আজাদ আসিফ বলেন, এই পাখিগুলোর দুর্বলতা দেখে স্যারে কথামতো প্রয়োজনীয় খাবারসহ সেবাযত্নের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে আমার বাসায় নিয়ে আসি। সুস্থ হলে তাদের বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবো। না হলে নিজেই অন্যবারের মতো বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে ছেড়ে দেবো। গত সপ্তাহে আমি প্রায় ২শ’ পাখি উদ্ধার করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে ছেড়ে দিয়েছি।  
 
নিজেরা স্ব-উদ্যোগী হয়ে পাখি উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বনবিভাগ বা বন্যপ্রাণী ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উপর নির্ভর না করে আমরা প্রকৃতিপ্রেমীরা একটু সাহসী ও উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা পাখিগুলো জব্দ করে ছেড়ে দিতে পারি। তাহলে দ্রুতই প্রাণে বাঁচবে বিপন্ন এ পাখিগুলো।  
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুসারে যে কোনো দেশি পাখি ধরা, বিক্রি করা, পালন করা এবং হত্যা করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনটিসহ পাখি বা বন্যপ্রাণী ধরা, বিক্রি করা, পালন এবং হত্যা এ বিষয়ে মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন করতে হবে।
 
দিনে দিনে আমাদের দেশের এই পাখি ও বন্যপ্রাণীরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে; তাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। দেখা যায়, আমাদের মতো মানুষরাও না জেনে দেশি পাখিগুলো অবৈধ পাখি বিক্রেতার কাছ থেকে বেশি দামে কিনে বন্যপ্রাণী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন-জানান ড. কামরুল হাসান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, ২০ নভেম্বর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।