ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

১৮ অজগর ছানা ফিরলো সবুজ প্রকৃতিতে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
১৮ অজগর ছানা ফিরলো সবুজ প্রকৃতিতে সাতছড়িতে অবমুক্ত ৬টি অজগর ছানা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বয়স তাদের ৪২ দিন। ছানাগুলো একত্রে থাকতে থাকতে কিছুটা বড় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে তারা নিজ থেকে খাবার খেতে শিখে গেছে। মাংসের থালা থেকে টুকরো টুকরো মাংসগুলোকে মুখে নিয়ে অনায়াসে খেতে পারছে। 

চলতি বছরের ১৬ জুলাই রাত থেকে অজগর ছানাগুলো ডিম থেকে ফুটতে শুরু করে। সর্বপ্রথম পাঁচটি অজগর ছানা চোখ মেলেছিল।

পরদিন সকাল পর্যন্ত এসব ডিম থেকে একে একে বাচ্চাগুলো পৃথিবীর আলো দেখতে শুরু করে। এর আগে ৮ জুন রাতে একটি অজগর সাপ ৩০টি ডিম দেয়।

শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন নিবিড় পরিচর্যা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার সঙ্গে অজগর ছানাগুলোকে বড় করে ফিরিয়ে দিয়েছে সবুজ প্রকৃতিতে।  

বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন এমপি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করার সময় ১২টি অজগর ছানা অবমুক্ত করেছিলেন। অবশিষ্ট ৬টি অজগর ছানা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোনে ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় অবমুক্ত করা হয়।  

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের খুব আনন্দ লাগছে যে, অজগর ছানাগুলোকে আমরা সবুজ প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। আহত বন্যপ্রাণীগুলো সেবাশুশ্রুষার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার পাশাপাশি বিপন্ন প্রাণীর সফল প্রজনন ও পরবর্তীতে সেসব বন্যপ্রাণীর ছানাকে বড় করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটি আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছি।

সব সময় তাদের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান সজল।  

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যে প্রাণীগুলো রয়েছে প্রায় সেগুলোই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট বিভাগের অন্য বনেও রয়েছে। অর্থাৎ, সিলেট বিভাগীয় চিরসবুজ বনাঞ্চলের একই প্রাণী। যে কোনো কিছু সাতছড়িতে ছাড়লে এগুলো খুব ভালো থাকবে। কারণ ওরা একই পরিবেশেরই প্রাণী। তাদের অভ্যাস, আচার-আচরণ একই রকম। সুতরাং, এরা প্রকৃতির সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে টিকে থাকবে।  

তিনি বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বন্যপ্রাণীগুলো রেসকিউ (উদ্ধার) করে বনে ছাড়লাম আর আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলো, ব্যাপারটি তা কিন্তু নয়। আমরা যদি বন্যপ্রাণীর প্রতি দায়িত্ববান হই তাহলে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যে, প্রাণীরা বনে কি খেয়ে বেঁচে থাকে। তাহলে আমরা দেখবো, আমাদের দেশীয় প্রজাতির কিছু গাছ যেমন- ডুমুর, বট, চামকাঠাল প্রভৃতি গাছ রয়েছে। ’ 

‘তাহলে আমাদের ওইসব ডুমুর, বট, চামকাঠালসহ দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো বন্যপ্রাণীদের টিকে থাকার কথা চিন্তা করে লাগতে হবে। আমরা যে কেউ যদি একটি চারাও লাগাই তবুও কিন্তু প্রকৃতির জন্য অনেক বড় একটি দায়িত্বপালন করা হলো। পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বড় একটা অংশ কিন্তু এই ডুমুর, বট প্রভৃতি ফলের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। আমরা যদি বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করার পাশাপাশি প্রতিবার দু’একটি ডুমুর বা বটের চারা লাগাই তাহলে এসব বন্যপ্রাণীর জন্য আমরা অনেক কিছু করলাম। বিষয়টি এভাবে দেখলে আমাদের দেশের মূল্যবান বন্যপ্রাণীরা প্রকৃতিতে টিকে থাকার সুযোগ পাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।