ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাইক্কা বিলে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট<br>ফেরদৌস আহমেদ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১১
বাইক্কা বিলে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের

বাইক্কা বিল থেকে : পর্যটকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বাইক্কা বিল। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা অপ্রতুল পর্যটন সুবিধা- কোনো কিছুই নিসর্গপ্রেমীদের বাইক্কাবিলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য সুধা উপভোগে বিরত রাখতে পারছে না।


 
বিপুল অতিথি পাখির কলতান আর দেশে বিলুপ্তির তালিকায় থাকা দেশীয় মাছ ও পাখি দেখতে এ বিলে কেবল সাধারণ পর্যটকরাই আসছেন তা নয়।

বাইক্কা বিলের বৈচিত্র দেখতে আসছেন দেশি-বিদেশি গবেষকরাও।   অনুপস্থিত পর্যটন সুবিধার মাঝেও বাইক্কা বিলে আসা প্রচণ্ড কৌতুহলী গবেষক-পর্যটকরা এর নিসর্গ পর্যবেক্ষণে শিশুর মত ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

বিচিত্র সব পাখি আর জলজ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বাইক্কা বিলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও চোখে পড়বার মতো। সরকারিভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের সূত্র ধরে দিন দিন বাইক্কা বিলে পর্যটক উপস্থিতি আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিতদের।

BAIKKAসম্প্রতি বাইক্কা বিল সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন বয়েসের পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বাইক্কা বিলে বেড়াতে আসা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহুরে জীবনযাপনের একঘেয়েমি দূর করতে প্রকৃতির কাছাকাছি আসতেই বাইক্কা বিলে এসেছি। অন্ততঃ একটি দিনের জন্য হারিয়ে যাবো প্রকৃতির কাছে। ’
তবে তিনি বলেন, ‘এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে এখানে আসতে হয়েছে। তারপরও নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের কাছে সেই কষ্ট কোনো বিষয় নয়। কিন্তু পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর অজুহাতে বাইক্কা বিলে যাতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করা হয়- ‌তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রকৃতিকে আনডিস্টার্বড রাখা উচিত। ’

BAIKKAরাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সৈয়দ খালেদুর রহমান বাংলানিউজকে জানালেন সপরিবারে বাইক্কা বিল দেখার পর তার অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ‘এক কথায় অসাধারণ লেগেছে বাইক্কা বিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, অ্যানিমেল প্ল্যানেট প্রভৃতি চ্যানেলে পাখি-জীবজন্তু দেখি। আজকে বাস্তবে দেখতে পেলাম। অনেক আনন্দ পেয়েছি। ’
 
২০০৩ সালে বাইক্কা বিলকে ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র’ ও ‘আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পাখির আবাস’ বিবেচনায় এনে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চা সম্বৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্ব দিকে ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে গঠিত বাইক্কা বিল।
 
অন্তর আর নয়ন মেলে যা দেখবেন বাইক্কা বিলে

BAIKKAমাছ ও পাখি ছাড়াও বাইক্কা বিলে পর্যটকদের বিমোহিত করবে জলজ প্রকৃতির সাহচর্যে জন্মানো নয়নাভিরাম সব ফুল ও লতাগুল্ম। বিলের কূলঘেঁষে দেখা মিলবে হাজারো পানা, শাপলা ও পদ্ম। এছাড়া বিরল প্রজাতির পানি সিঙ্গারা ও মাখনা রয়েছে বাইক্কা বিলে। সন্ধ্যায় বিলে দেখা যাবে বিচিত্র আকৃতির ড্রাগন ফ্লাই বা ফড়িং। জীবনের অধিকাংশ সময় পানির নিচে কাটানো এ প্রাণী পরিণত বয়েসে পানির উপরে উঠে পতঙ্গ আকৃতি ধারণ করে।

শীতকালে বাইক্কা বিলে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ পাখি দর্শন। এ সময় বিলের সর্বত্র যেসব পাখির সরব উপস্থিতি মুগ্ধ করবে সবাইকে, এদের মধ্যে-পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক আর গোবক অন্যতম। কম হলেও দেখা যাবে ধুপনি বক ও রাঙ্গা বকের। বিলের প্রবেশদ্বারে ও দক্ষিণ পার্শ্বে দেখা যাবে লম্বা পা’য়ের পাখি দলপিপি আর নেউপিপি। বিলের পশ্চিমে দেখা যাবে পান মুরগি ও বেগুনি কালেম। কোথাও দেখা যাবে কালামাথা কাস্তেচরা কাদামাটি ঘাটছে।

BAIKKAশীতে এই বিলে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসা অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ আর কলকাকলি নজর কাড়বে পাখিপ্রেমীদের। এদের মধ্যে গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা টিটি আর কালাপাখ ঠেঙ্গীর দেখা মিলবে অহরহই।
 
এদের বাইরে বাইক্কা বিলের স্থায়ী বাসিন্দা পাখিদের মধ্যে ধলাবালি হাঁস, শঙ্খচিল, ভূবনচিল অন্যতম। আঞ্চলিক অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাতি সরালি আর রাজ সরালি। বিদেশি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাশিয়া তথা সাইবেরিয়া থেকে আসা মরচেরং, ভূঁতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস এবং ল্যাঞ্জা হাঁস।

এ বিলের নিয়মিত অতিথি পাখি পান ভোলানি। বিপন্ন তালিকায় থাকা পালাশী কুড়া ঈগল পাওয়া যাবে এই বিলে। এশীয় অঞ্চল থেকে আসা গুটি ঈগলকেও নিশ্চিন্ত মনে উড়তে দেখা যাবে বাইক্কা বিলে। বিলের অন্যান্য পাখির মধ্যে, দাগি রাজহাঁস, খয়রা চখাচখি, উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, পাকড়া কোকিল, নীললেজ সুইচোর, পাতি আবাবিল, দাগি ঘাসপাখি, বাংলা শকুন, পাতিচ্যাগা উল্লেখযোগ্য।

সরীসৃপদের মধ্যে সাপ ও স্বাদু পানির কচ্ছপ রয়েছে এই বিলে, তবে এদের সচারাচর দেখা পাওয়া কঠিন।

পথের দিশা

BAIKKAরাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু যে কেউ যেতে পারেন বাইক্কা বিলে। সড়ক ও রেলপথ- দু’ভাবে আসা যায় শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কে ৯ কিলোমিটার এসে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমের সাইনবোর্ড পাওয়া যাবে। বা’দিকে সরু রাস্তায় ৩ কিলোমিটার যাওয়ার পর ফের বাঁয়ে ০.৫ কিলোমিটার দূরে হাজীবাজার। বাজার সংলগ্ন সেতু পার হয়ে ডানে মোড় নিয়ে ০.৭ কিলোমিটার গেলেই রাস্তার ডানে পড়বে অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণকারী আরএমও অফিস। এই অফিস থেকে মাটির রাস্তায় ৫ কিলোমিটার গেলে পৌঁছে যাবেন বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম। বিলে প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫ টাকা। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠার ফি ২০ টাকা আর নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে ঘণ্টা ৬০ টাকা ফি দিতে হবে।     

বাংলাদেশ সময় : ১৯৪১ ঘণ্টা, ২১ ডিসেম্বর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।