কিন্তু প্রাকৃতিক এসব জলাশয়ে আজ তাদের জন্য হয়ে উঠেছে অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ক্রমশই প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম মাছের খামার বা ঘের।
বিল-হাওর সংলগ্ন পুরাতন বৃক্ষ, পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড় বা জলচর পাখিদের বসবাসের উপযুক্ত স্থানগুলো আজ ক্রমশই বিনষ্ট হয়ে গেছে।
পাখি বিশেষজ্ঞর মতে, অন্যান্য জলাভূমির পাখিদের মতো আবাসস্থল আর প্রজনন সংকটের শিকার এই গয়ার পাখিটিও।
জলজ এই পাখিটির নাম ‘গয়ার’। ইংজেজিতে এর নাম Oriental Darter এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anhinga melanogaster, তবে কেউ কেউ পাখিটিকে ‘সাপপাখি’ হিসেবে ডেকে থাকে। সম্প্রতি বাইক্কা বিল থেকে পাখিটির এ ছবি দুটো তুলেছেন আলোকচিত্রী তারিক হাসান। বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো ডারটার বিপন্ন পাখি। এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে থেকে এর সংখ্যা খুবই কমে গেছে। আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমরা যখন ১৯৯৪ সালের হাওর-বিলগুলোতে পাখি গণনার জন্য যেতাম তখন একেকটা বিলেই ১০/১২টা করে ডারটার দেখতাম। এখন পুরো হাওরে হয়তো ১/২টা পাই। এতই এরা কমে গেছে এবং অন্য জায়গায় তো দেখতেই পাই না।
তিনি আরও বলেন, আমি ১০ বছর আগে চট্টগ্রামে একটা পুকুরে তাকে উড়ে এসে নামতে দেখেছিলাম। তারও দুই-তিন বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিলে আমি হঠাৎ দেখি উড়ে এসে পানিতে নামলো একটি গয়ার। তখন সঙ্গে সঙ্গে পাখিটির কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম। এখন এসব জায়গায় বিশেষ করে পুকুর বা জাবির বিলে একেবারেই দেখা যায় না। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী বাঁশঝার বা অন্যত্র দুই-একটা জায়গায় আমি পাখিটিকে বসে থাকতে দেখি। কারণ, এ পাখিটি রাত্রি কাটায় বাঁশঝাড়ে অন্যান্য বক-সারসদের মাঝে। পাখিগুলো বাসাও বাঁধে অন্য বকের সঙ্গে।
পাখিটির শারীরিক আকৃতি সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ডারটার পাখিটি হাঁসের চেয়ে বড়। প্রায় ৯৭ সেন্টিমিটার। সারাদেহ কালো। চঞ্চু (ঠোঁট) মাথা ও গলা বাদামি এবং গলায় লম্বা রূপালি দাগ। ওর গলাটা লম্বা ও চিকন। সে যখন শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির নিচ থেকে মাথা বের করে রাখে বা এগিকে-ওদিক তাকায় তখন তাকে দেখতে সাপের মতো লাগে। আমি নিজেও এটা দেখেছি অনেকবার। এজন্যই হয়তো লোকে এই ডারটারকে ‘সাপপাখি’ বলে থাকেন।
আমরা পাখি গণনায় আজকাল সারাদেশ মিলে ডারটার তেমনভাবে পাই না। আমাদের প্রাকৃতিক হাওর-বিলেই পাখি গণনায় এ পাখিটির প্রাপ্তি সংখ্যা ১০ এর উপর কিছুতে উঠে না। এই পাখিটি কেন কমে যাচ্ছে। এটা আমাদের আসলে জানা নেই। ও তো যেকোনো জায়গার বিল-জলাশয় থেকে মাছ ধরতেই পারে। কিন্তু কেন এভাবে কমে যাচ্ছে এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। ওর প্রজনেন জায়গাও আমরা এখন একেবারেই দেখি না। ওর প্রজননসংকটও ওর দ্রুত বিলুপ্তির পেছনে অন্যতম কারণ বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
বিবিবি/এএটি