জনৈক প্রভাবশালী আলী ঈমাম নিজের ক্রয়কৃত সত্ত্ব দাবি করে বড়গাঙ্গিনা খাল জলমহালের পাড়ে আরএস দাগ নং-১০০১ এর ভূমিতে সৃজন করা বনায়নের সীমানার গাছ কেটে কৃত্রিম মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করছেন। এর ফলে জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ মারাত্মকভাবে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা।
গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে বড়গাঙ্গিনা খালে এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চলছে। এদিকে, ক্রমাগত খাল খননের ফলে বাইক্কাবিল মৎস্য অভয়াশ্রম সংলগ্ন খালের পাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন (আরএমও) সূত্র জানায়, বাইক্কাবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলোর একটি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই জলাশয়। আরএমও হাইল হাওরের একটি অংশ সরকার ঘোষিত স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম যা বাইক্কাবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। সংগঠনের প্রতিষ্ঠায় বাইক্কাবিলকে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং এই বিলে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ বংশবৃদ্ধি করে বর্ষা মৌসুমে পুরো হাইল হাওরে ছড়িয়ে পড়ে।
আরএমও সূত্র আরও জানায়, বাইক্কাবিল সংলগ্ন খালের জায়গাটি ২টি দাগে হবিবপুর মৌজার অন্তর্ভুক্ত। যার জেএল নং-৪৫, খতিয়ান নং-১, এসএ দাগ নং-৪৯৫, আরএস দাগ নং-৫০১ এবং জেএল নং-৪৫, খতিয়ান নং-৩০৭, এসএ দাগ নং-১০৪৯, আরএস দাগ নং-১০০১।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন বাইক্কাবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকৃতির দীঘির গর্ত করে রাখা হয়েছে। এক্সলেটর (মাটি কাটার যাত্রিক মেশিন) দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে ভূমির শ্রেণি এবং খাল সংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবস্থা।
বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষে সরকারি খাস ভূমিতে বাইক্কাবিলের মৎস্য ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখে হিজল-করচের বাগান সৃজন করেছিলাম। অতি সম্প্রতি আলী ইমান নামে এক ব্যক্তি মাছের খামারের নামে আমাদের গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। এছাড়াও তিনি ভূমির ম্যাপ পরিবর্তন করে সরকার খাস জায়গা উনার নিজের জমির সঙ্গে পাল্টে দিয়েছেন। যার দাগ নম্বর ১০০১।
মিন্নত আলী আরও বলেন, যেখানে খাল খনন এবং গাছ কাটা হয়েছে এটা সরকারি জায়গা। আলী ঈমান ম্যাপ সংশোধন করে সরকারি জায়গার দাগ নম্বর এবং নিজের লিজভুক্ত জায়গার দাগ নম্বর সিস্টেম করে নিজের নামে রেকর্ড করে ফেলেছেন। এটা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তার নামে মামলাও রয়েছে। নম্বর ল্যান্ড সার্ভে মামলা নং-৩২৫/২০১৬। মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় তিনি কিভাবে ভূমিতে খনন কার্যক্রম চালিয়েছেন এটা আমরা বুঝতে পারছিনা। কোনো ব্যক্তির জন্য আমাদের জাতীয় সম্পদ তো নষ্ট হতে পারে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আলী ঈমাম বলেন, ১০০২ দাগের এই জায়গাটি আমার। আমি মৎস্য খামার তৈরির জন্য মাটি খনন করছি। আমি কোনো গাছ কাটিনি। মাটি খননের গাড়িতে লেগে কিছু কাটা পড়তে পারে। সরকারের সঙ্গে আমার কোনো মামলা নাই।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাইক্কাবিলের একদম পার্শ্ববর্তী খাল বড়গাঙ্গিনা। এটা যতদূর গেছে এর আশপাশে কারোর ব্যক্তিগত জমি হলেও যে কেউ যা খুশি তা করতে পারবেন না। বাইক্কা বিল আমাদের দেশের একটি সেঞ্চুরি (অভয়াশ্রম)। সেঞ্চুরির উপর যে সব বিরূপপ্রভাব পড়বে তার জন্য দায়ী থাকবেন ওই ব্যক্তি। বাইক্কাবিলের বড়গাঙ্গিনার পূর্বপাশে এবং দক্ষিণপাশে যাদের ব্যক্তিগত জমি আছে অর্থাৎ ব্যক্তিগত জমি লিজ নেয়া যেখানে তারা যাই করুক প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে করবে বলে অঙ্গীকার করে তারপর জমি লিজ নিয়েছেন।
সুতরাং তারা আইনতই কিছু করতে পারেন না, যার ফলে বাইক্কাবিল সেঞ্চুরির কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনায় আনা দরকার। তা না হলে এই জলাভূমি সম্পদকে রক্ষা করা যাবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের কাজে আমি কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
বিবিবি/আরএ