সূত্র জানায়, সোমবার (২২ জুন) বিকেলে মা লজ্জাবতী বানরকে তার একটি ছানা নিয়ে খাঁচায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষদের দাবি এভাবে চারবার বাচ্চা দিয়েছে এ প্রাণীটি।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বাংলানিউজকে বলেন, এ নিয়ে মোট চারবার এই লজ্জাবতী বানরটি খাঁচায় বন্দি অবস্থায় বাচ্চা দিয়েছে। এর আগে আরো তিনবার দিয়েছিল।
তবে একই লজ্জাবতী বানর চারবার খাঁচায় বন্দি থাকা অবস্থায় বাচ্চা দেওয়ার বিষয়টির প্রতি কিছুটা আপত্তি জানিয়ে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আসিফ আদনান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, একই লজ্জাবতী বানর খাঁচায় বন্দি অবস্থায় চারবার বাচ্চা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে যে, একটি মা লজ্জাবতীকে এত বছর প্রকৃতিতে ছাড়া হয়নি কেন?
‘এই লজ্জাবতী বানরটা গত আট বছর ধরে আমার বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে চারবার বাচ্চা দিচ্ছে এটি বললে সমালোচনার মুখে পড়াটাই স্বাভাবিক। ’
তিনি আরো বলেন, একটি বন্যপ্রাণী দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দি অবস্থায় চারবার বাচ্চা দিয়েছে এটা একদমই প্রশংসার দাবি রাখে না। অনেক সমালোচনার জন্ম দেয় এ জন্য যে, তাহলে এটাকে কেন এতদিন প্রকৃতিতে ছাড়া হয়নি। এখানে বাচ্চা হয়েছে এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
‘ফাস্ট ইন, ফাস্ট আউট’ এর কথা উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, ওনার ওখানে বন্যপ্রাণী আছে এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যেমন ধরেন- জানুয়ারি মাসে আপনি একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন, এটাকে সুস্থতার ভিত্তিতে মার্চ বা এপ্রিলে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ যে বন্যপ্রাণীগুলোকে সিরিয়াল অনুযায়ী আগে উদ্ধার হবে তাকে আগে ছাড়তে হবে। আটকে রাখা যাবে না। এটাকে বলে ‘ফাস্ট ইন, ফাস্ট আউট’ (ফিফো)। যে কেউ রেসকিউ করলে তাকে ফিফো পদ্ধতি অনুস্মরণ করতে হয়।
খাচাবন্দি অবস্থায় একই প্রাণী চারবার বাচ্চা দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে দীর্ঘদিন থাকার ফলে এই মা লজ্জাবতী বানরটি নিজেকে নেচারের মাঝে খাপখাওয়াতে পারে না। তাই একে নেচারে ছাড়লেও সে সারভাইব করতে (টিকে থাকা) পারবে না। আর নেচারে খাপখাওতে না পারলে ওর মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। আর ওর বাচ্চাগুলোকে আমরা বড় করে তারপর স্থানীয় বনবিভাগের পরামর্শক্রমে বনে অবমুক্ত করি।
লজ্জাবতী বানর নিশাচর এবং বৃক্ষে বসবাস করা প্রাণী। এরা দ্রুত বেগে চলাচল করতে পারে না; ধীরগতিতে গাছের ডালে ডালে চলাফেরা করে। গাছের ডালপালা ঘেরা অপেক্ষাকৃত অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান তাদের অধিকতর প্রিয়।
আইইউসিএন এর লাল তালিকা অনুযায়ী লজ্জাবতী বানর পৃথিবীতে সংটাপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রাণী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ২৩ জুন ২০২০
বিবিবি/এএ